পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৬৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সীতারামের রাজধানী 48ઠ এইরূপ বলেন ; সীতারাম সে প্রস্তাবে সক্ষত হন। বঙ্কিমচন্দ্র এই মত গ্রহণ করিয়াছেন, গল্পটিও সেইজন্ত বদ্ধমূল হইয়াছে। এমন কি, মহম্মদপুর দুর্গে প্রবেশ পথের বামদিকে পদ্মপুকুরের কুলে একস্থানে মহম্মদ শাহের আস্তানা ছিল বলিয়া প্রদর্শিত হয়। কিন্তু সেখানে সীতারামের প্রতিষ্ঠিত কোন ইমারত বা মসজিদ নাই। একজন সাধু ফকিরের আস্তান সেখানে থাকিলে বা তাহার জন্য একটি মসজিদ গঠিত হইলে, তাহাতে কি ক্ষতি হইত, তাহ বুঝিয়া পাই না। বিশেষতঃ যখন সীতারামেরও রাজনৈতিক তীক্ষ বুদ্ধি দেখি এবং তিনি প্রতাপাদিত্যের মত হিন্দু মুসলমানকে মিলাইয়া মিশাইয়া লইয়া স্বকাৰ্য সাধনে তৎপর হইয়াছিলেন, তখন মনে হয় না যে মুসলমান ফকিরকে স্থানান্তরিত করিবার জন্তই তিনি বাধ্য হইয়া মহম্মদপুর নাম রাখিয়াছিলেন। কোন একজন মুসলমান ফকির সেখানে থাকিতে পারেন, কিন্তু শুধু তাহার সস্তুষ্টির জন্ত বা বিরাগের ভয়ে নহে, পাশ্ববৰ্ত্তা সমস্ত মুসলমান সম্প্রদায়ের সহানুভূতির প্রত্যাশায় এবং হিন্দু মুসলমানের প্রতি বন্ধন করিবার উদ্দেঙ্গে সীতারাম মহম্মদপুর নাম রাখেন, ইহাই আমার নিকট সমীচীন বলিয়া বোধ হয়। শতাধিক বর্ষকাল মোগলশাসন চলিলেও পাঠানগণ তখনও শান্ত হয় নাই ; সাধ্যপক্ষে যেখানে সেখানে তাহার বিদ্রোহী হইত ; স-তৈরে সীতাবাম যে করিম খার বিদ্রোহ দমন করেন, তিনিও পাঠান; সীতারাম যখন ক্ষমতাপন্ন রাজা হইয়া বসিলেন, তখন পাঠানের র্তাহার দিকে চাহিতেছিল ; মোগলের কঠোর শাসন হইতে দেশরক্ষা করা, টুেকু স্থানে সাধা, দেশীয় শাসন প্রবর্তিত করা যে সীতারামের গূঢ় উদেন্ত ছিল, তাহ অস্বীকার করা যায় না। সেই দূর অভিসন্ধি সমুখে রাখিয়া, সীতারাম অনেক পাঠানকে সৈন্যদলে আশ্রয় দিয়াছিলেন, অনেকে সাধিয়া আসিয়া তাহার শরণাপন্ন হইয়াছিল। তাহদের সকলের সহানুভূতি দৃঢ়ভাবে আকর্ষণ করিবার জন্ত, তিনি মোল্যাদিগের পরামর্শে রাজধানীর নাম হজরতের নামানুসারে মহম্মদপুর রাখিয়াছিলেন । সীতারাম তাহার মুসলমান সেনাপতিদিগের সহিত ভ্রাতৃসম্বন্ধ স্থাপন করিতেন, তাহাদিগকে “ভাই বলিয়া ডাকিতেন। হিন্দু মুসলমান প্রজার মধ্যে মৈত্রীবন্ধন দৃঢ় করিরার জন্ত তিনি সৰ্ব্বদা উপদেশ দিতেন। সে সৰ উপদেশ-বাণী লোকমুখে ও ভিক্ষুকের গানে দেশময় ।