পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 যশোহর-খুলনার ইতিহাস হউক, অন্ততঃ যাহাদের রাজ্য সমুদ্রকৃলবর্তী, তাহার প্রজার জীবন রক্ষার জন্ত এদিকে দৃষ্টি নিবন্ধ না করিয়া পারিতেন না। তাই সময়ে সময়ে কয়েকজন মিলিয়া এই সাধারণ শক্রর সহিত যুদ্ধ করিতেন। সে শত্রগণও সহজ দস্থ্য নহে, তাহারাও রাজনৈতিক কূটকৌশলে অতুলনীয় ; নানাভাবে ভুঞাদিগের দররারে প্রবেশলাভ করিয়া তাহারা কখনও উৎকোচ উপহার দিয়া, কখনও স্বার্থের মোহে অন্ধ করিয়া, ভেদনীতিদ্বারা ভুঞাসম্প্রদায়ের মধ্যে হিংসানল জালাইয়া দিত। তখন ভূঞাগণ আত্মঘাতীর মত পরস্পরের সহিত যুদ্ধরত হইতেন এবং সাগরতরঙ্গ বা নদীবক্ষ নররক্তে রঞ্জিত করিয়া নিজেরাই দুৰ্ব্বল হইয় পড়িতেন। মোগলের বিপুল বাহিনী যাহাদের দ্বারে দ্বারে হানা দিতেছিল, তাহাদের পক্ষে এইরূপভাবে বলক্ষয় বা ধনক্ষয় দ্বারা দুৰ্ব্বল হইয়া পড়া বিশেষ আশঙ্কার বিষয়ই ছিল, এবং তাহাতে উহাদের পতনের পথই পরিষ্কার করিয়া দিতেছিল। মগ-ফিরিঙ্গির অত্যাচার মোগলেরই কাৰ্য্যসিদ্ধির সহায় হইয়াছিল। পরে যখন ভূঞাদিগের পতন হইয়া গেল, তখন ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকালে মোগলদিগকে অসংখ্য রণতরী পঠাইয়া চট্টগ্রাম অঞ্চলে এই সকল শত্রু নিপাত করিতে হইয়াছিল। বঙ্গের বারভুঞা পরাক্রান্ত আকবর বাদশাহের রাজশক্তিকে পরীক্ষা করিয়া লইয়াছিল ; যদি সে পরীক্ষায় আকবর জয়ী ন হইতেন, তবে পাঠানের করচু্যত রাজদণ্ড কাহার হস্তে শোভা পাইত তাহ বলা যায় না। সময় অল্প বা সুযোগ স্বল্প হইলেও, ভূঞাগণ আপন আপন ক্ষেত্রে যে রণদক্ষতা ও রাজনৈতিক মস্তিষ্কের পরিচয় দিয়াছিলেন, অপর পক্ষে মানসিংহ বা টোডরমল্পের অসাধারণ প্রতিভার সহায়তা না থাকিলে, তাহার বঙ্গের ভাগ্য নূতন করিয়া গড়িতে পারিতেন। অবশেষে ভূঞাদিগের অভু্যখান বিফল হইলেও তাহদের শক্তিসঞ্চর ও প্রচেষ্টার ফল বহুদূর পৰ্য্যন্ত গড়াইয়াছিল। প্রতাপাদিত্যের ইতিহাস হইতে আমরা তাঙ্গর সুস্পষ্ট আভাস পাইব। তাহার সাধনার ফলে এমন ভাবে যশোহর-খুলনার ভাগ্যসূত্র সমগ্র বঙ্গের সহিত মিশিয়া গিয়াছিল, যে এই ক্ষুদ্র রাজ্যখণ্ডের ইতিহাসকে বঙ্গেতিহাস হইতে পৃথক্ করা যায় না।