পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস প্রথম খণ্ড.djvu/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sev যশোহর-খুলনার ইতিহাস । গেলে আমোদ উপভোগের কোন সম্ভাবনা নাই। এখানে হিংস্ৰজন্তুর এত উৎপাত যে প্রাণ হাতে করিয়া বাহির হইতে হয়, জঙ্গলের নিবিড়ত ও পথের অগম্যতা লক্ষ্য সন্ধানের কোন বাহাদুরীর পরিচয় দিতে দেয় না ; আবার খোলা বাতাস নাই, লোণাজল আছে ; আশ্রয় নাই কিন্তু অকুল সমুদ্রোপম নদীপথে পথভ্রাস্তির যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে ; সাধারণ স্বাস্থা যেমন খারাপ, চিকিৎসকের সাহায্যের প্রত্যাশা সেইরূপ সুদূরপরাহত। এই জন্য পাশ্চাত্য শিকারিগণ এ প্রদেশে আসেন না, আসিলেও ষ্টীমার হইতে ভূপৃষ্টে অবতরণ করেন না ; সুতরাং সাধারণতঃ কেহ এ বিষয়ে লেখনী চালন করেন না, যদি কেহ কোন সামান্ত বিবরণ সংগ্ৰহ করিয়া থাকেন, তাহ অনুমান ও কল্পনা বলে পুষ্ট করিয়া প্রকৃত তথ্য হইতে দূরস্থ করিয়া ফেলেন। সরকারী রিপোর্ট সুন্দরবনের আয় বার বা বিলিবন্দোবস্ত সম্বন্ধে যাহা কিছু বিবরণ থাকে, ইহার ঐতিহাসিকতা, প্রাচীনত, বা সাধারণ অবস্থাদি সম্বন্ধে তাহাতে কোন উল্লেখযোগ্য ৰ গ্ৰহণযোগ্য তথ্য থাকে না। দূরে বসিয়া বাওয়ালী ও কাঠরিয়াদিগের মুখে কিছু কিছু গল্প শুনা যায় বটে, কিন্তু সে সকল গল্পের মূল কথা বন হইতে জনস্থানে পৌঁছিতে পৌছিতে এত অতিরঞ্জিত হইয়া যায় যে, তাহার উপর আস্থা স্থাপন করা কঠিন। এই সকল কথা বুঝিরা, আমরা স্বচক্ষে সুন্দরবনের অবস্থা পর্যবেক্ষণপূর্বক বিবরণ সংগ্ৰহ করিবার জন্য কয়েকবার একপ্রকার প্রাণ হাতে করিয়া দুৰ্গম জঙ্গলে প্রবেশ করিয়াছিলাম, এ প্রদেশের স্বাস্থ্যে অনভ্যস্ত বিদেশীয়গণের পক্ষে সেরূপ ভ্রমণ করা বোধ হয় সম্ভবপরই নহে। আমাদের ভ্রমণপ্রণালীর সামান্ত বর্ণনা হইতে বনভাগের অবস্থা সম্বন্ধেও কিছু বিবরণ পাওয়া যাইতে পারে। প্রত্যেকবারেই রাসুলনিবাসী রাসাহেব প্রযুক্ত নলিনীকান্ত রায়চৌধুৰী মহাশয় আমাদের অভিভাবক ও পথপ্রদর্শক হইতেন। তিনি বম্বে মেডিক্যাল কলেজে ৬বৎসর অধ্যয়নের পর ডাক্তার হইয়া বাড়ী আসেন, তদবধি গত ২২ বৎসর যাবৎ অবিরত মুন্দরবনে ভ্রমণ ও শিকার করিতে করিতে তৎসম্বন্ধীয় এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছেন। বিস্তীর্ণ বনবিভাগের খাল-নীল, পথঘাট, ভাবভাষা, প্রত্নকীর্টি সকলই তাহার নখদর্পণে রহিয়াছে। সাহস করিাবলিতে পারি, সমগ্ৰ ৰঙ্গদেশে এ বিষয়ে এরূপ অভিজ্ঞতা আর কাহারও নাই। শুধু তাহাই নহে, তিনি যেমন অদম্য সাহসী, তেমনই স্থির লক্ষ্য শিকারী: