পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস প্রথম খণ্ড.djvu/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম পরিচ্ছেদ—উপবঙ্গে দ্বীপমালা। >さふ নবদ্বীপ হইতে ত্রিবেণী পর্যন্ত ভাগীরথী বেশ সজীব থাকিল। ত্রিবেণীতে যখন ভাগীরথী দক্ষিণে সরস্বতী ও বামে যমুনায় বিমুক্ত হইয়া গেল, তখন আবার মূল স্রোত দুৰ্ব্বল হইয়া পড়িল এবং অবশেষে কালীঘাটের নিম্ন দিয়া প্রবাহিত হইবার কালে উহা ক্রমশঃ অপ্রশস্ত হইতে লাগিল। ত্রিবেণী হইতে সরস্বতী নদী বেগবর্তী হইয়া সমুদ্রে পড়িয়াছিল এবং সেই পথে সেকালে বঙ্গদেশের শিল্প ও পণ্যবাহিনী দূরদেশে নীত হইত। ভাগীরথীর একটি ক্ষুদ্র স্রোত বর্তমান কলিকাত দুর্গের সন্নিকট হইতে শাখরোল নামক স্থানে সরস্বতীর সহিত সংযুক্ত হয়। ক্রমে ঐ ক্ষুদ্র খাল প্রশস্ত হয় এবং ইংরাজ আমলের প্রারম্ভে উহার কতকাংশ তাহদিগের দ্বারা খনিত হয়। তাঁহাতে গঙ্গার মূল প্রবাহ ঐ পথে শাখরোলে আসিয়া সরস্বতীর সহিত মিশিল এবং সেস্থান হইতে সরস্বতীর মোহানা পৰ্য্যন্ত সমস্ত প্রবাহ গঙ্গার অঙ্গীভূত হইয়া গেল। এজন্ত এ সময় হইতে যেস্থানে গঙ্গার সাগরসঙ্গম হইল, তাহ প্রকৃতপক্ষে সরস্বতীর মোহান, প্রাচীন গঙ্গাসঙ্গম হইতে উহা সম্পূর্ণ পৃথক। হুগলীতে ইংরাজদিগের একটি কুঠি ছিল। পূৰ্ব্বে সরস্বতী-পথে হুগলীতে র্তাহাদের জাহাজাদি যাতায়াত করিত, এখন সমুদ্রপ্রবাহ শাখরোল হইতে গঙ্গার পথে প্রৰ্ত্তিত হওয়ায় তথা হইতে ত্রিবেণী পর্য্যন্ত সরস্বতী মজিয়া গেল। সে প্রাচীন খাত এখনও রহিয়াছে। হুগলী পর্য্যন্ত বাণিজ্যপথ গঙ্গার পথে কলিকাতার নিম্ন দিয়া উন্মুক্ত হইল, এজন্ত ইংরাজগণ এ অংশের নাম রাখিলেন—হুগলী নদী। অপরদিকে কালীঘাটের নিম্নবৰ্ত্তী প্রাচীন খাত বা “আদিগঙ্গা” টলী ( Tolley ) সাহেবের খনিত টালীর নালায় পরিণত হইয় মজিয়া গেল এবং দক্ষিণমুখে প্রবাহিত হইয়া “ঘোষের গঙ্গা” “বোসের গঙ্গা” নামে বদ্ধ জলাশয়স্বরূপ ম্যালেরিয়ার বাসভূমি হইয়া রহিয়াছে। গঙ্গার এই আধুনিক অবস্থার সহিত যশোহর-খুলনার ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ না থাকিলেও ইহার প্রাচীন প্রকৃতি সহিত সমস্ত বঙ্গদেশের বিশেষ সম্বন্ধ রহিয়াছে, যশোহর-খুলনার ত কথাই নাই। আমরা দেখিয়াছি যে পদ্মা ও গঙ্গার সঙ্গমস্থলের দক্ষিণে মহাভারতীয় যুগে বহুদ্বীপের উন্মেষ হইয়াছে, তাহাদের মধ্যে অসংখ্য নদী ছিল ; পাগুবেরা সে সকল নদীতে স্নানাদি করিয়া সমুদ্রতীর দিয়া কলিঙ্গাভিমুখে চলিয়া যান। ক্রমে ভাগীরথীর পূৰ্ব্বতীরে ও পদ্মার দক্ষিণ তীরে চর হইতে দ্বীপ স্বষ্টি হইতে থাকে। ১৭