পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস প্রথম খণ্ড.djvu/৪১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৩২ যশোহর-খুলনার ইতিহাস । সাধ করিয়া এই জলাশয়ে কালাপাড় ও ধলাপাড় নামক দুই কুমীর ছাড়িয়া দিয়াছিলেন ; হয়ত এই কৃত্রিম জলাশয়কে স্বাভাবিক জলাশয়ের মত সৰ্ব্বপ্রকার জীব-জন্তুতে পূর্ণ করিতে র্তাহার ইচ্ছা হইয়াছিল এবং মানুষের চিরশত্রুকে অভ্যাস দ্বারা অনপকারী করিয়া তুলিবার খেয়ালও এই ইচ্ছার অন্তভূক্ত ছিল কিনা বলা যায় না। নদীর সহিত সংযোগবিশিষ্ট নিকটবৰ্ত্তী বিল হইতে কুমীর আসিয়া এই বিরাটু দীঘিতে পড়াও আশ্চর্যের বিষয় নহে। হয়ত শেষে তাহাদিগকে থান্ত দিয়া বশীভূত করিয়া খাঁ জাহান তাহাদের নামকরণ করিয়াছিলেন । যাহা হউক, খ জাহানের সে কালাপাড়, ধলাপাড় এখন আর নাই, তাহাদের পরে বহুপুরুষ পার হইয়াছে। কিন্তু সেই বীরপুরুষেরা নরমাংস-লোভ পরিহার করিয়াছিল, বলিয় তাহাদের বংশধরগণও সেগুণ পাইয়াছে। এখনও ঠাকুর দীঘিতে এবং ঘোড়া দীঘিতে কতকগুলি কুমীর আছে; তাহারা মানুষকে আক্রমণ করে না, তবে তাহাদের নিকট খাদ্যের দাবি করিবার জন্ত স্নানের সময় নিকটবৰ্ত্তী স্থানে ভাসিয়া থাকে। থাঞ্জালী এখন একজন পীর। সে পীরের নিকট হিন্দু মুসলমানে সির্ণ মানসা করে ; এবং কুমীরদিগকে খাওয়াইলে খাঞ্জালী পীরকে তুষ্ট করা হয়, এই বিশ্বাস পোষণ করে। কত লোক যখন তখন সির্ণা দিতে আসে, খই চিড়া, চিনি বাতাসা ; মোরগ পায়রা—এমন কি, দুই এক হিন্দুতে পাঠা পৰ্য্যন্ত সির্ণ দেয়। এই সকল নৈবেদ্য দ্রব্য উৎসর্গ করিবার জন্ত তাহার দীঘির কুলে দাড়াইয়া কালাপাড় ধলাপাড়কে “আয় আয়” বলিয়া ডাকে, তখন কালাপাড় ধলাপাড়ের বংশধরেরা ঘাটের পাশ্বে চারিদিক্ হইতে মাথ৷ উচু করিয়া ভাসিতে থাকে এবং খাদ্য দ্রব্য নিক্ষেপ করিলে অনেক সময় সিড়ির উপর আসিয়াও উহা লইয়া যায়। মৎস্তে খায়, কুমীরে খায়, তাহাতেই জীবভক্ত কীৰ্ত্তিমান খাঁ জাহানের পারলৌকিক তুষ্টি-সাধন হয়। প্রতি বৎসর চৈত্রমাসে ঠাকুর দীঘির কূলে একটি প্রকাও থাঞ্জালী মেলা হইয়া থাকে, বহু দূরবর্তী স্থানের হিন্দু-মুসলমান এ মেলায় আসিয়া থাকে। যিনি সকল জাতিকে ভালবাসেন, তিনি সৰ্ব্বজনপ্রিয় হইয়া থাকেন। প্রবাদ আছে, মৃত্যুর কয়েক বৎসর পূৰ্ব্বে খ জাহান ভগবানের নিকট কোথায় তিনি দেহত্যাগ করিবেন, সে স্থান নির্দেশ করিয়া দিবার জন্য প্রার্থনা করিয়া