পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস প্রথম খণ্ড.djvu/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় পরিচ্ছেদ-নদী-সংস্থান। যশোহর খুলনার সমতল ভূমি ক্রমে দক্ষিণদিকে নিম্ন। সুতরাং জলের গতি সৰ্ব্বত্রই দক্ষিণদিকে। নদীগুলির মধ্যে অধিকাংশই দক্ষিণবাহিনী। যে দুই চারিটি নদী পূৰ্ব্ব-পশ্চিমে প্রবাহিত আছে, তাহারা বহুধা বিভক্ত হইয়া শুধু দক্ষিণমুখী শাখাসমূহের দেহপুষ্ট করে। পূৰ্ব্বদিক্ হইতে আরম্ভ করিলে দেখা যায়, কুষ্টিয়ার সন্নিকটে গৌরী, গোরাই বা গড়ই নদী পদ্ম হইতে বাহির হইয়া নদীয়া জেলা দিয়া যশোহরে প্রবেশ করিয়া কুমার নদের সহিত মিশে এবং পরে কুমারের শাখ বারাসিয়া দিয়া দক্ষিণ মুখে প্রবাহিত হয়। কিন্তু কালে গৌরীর জলপ্রবাহ এত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় যে বারাসিয়া হইতে এলেংখালি নামে একটি পৃথক শাখা বাহির হইয়া যায়। পূৰ্ব্বে বারাসিয়ার নিয়ে মধুমতী নাম ছিল, এখন এই এলেংখালিও বিস্তারলাভ করিয়া মধুমতীর অন্তৰ্ভুক্ত হইয়াছে। অনেক দূরে আসিয়া যেখানে মাণিকদহের সন্নিকটে মধুমতী ডানদিকে আঠারবাকী শাখা প্রসারিত করিয়াছে, সেখান হইতে ইহা খুলনা জেলার পূৰ্ব্বসীমা ধরিয়াছে। ক্রমে যাইতে যাইতে ইহার বিস্তার ও বলবৃদ্ধির সঙ্গে মধুমতী নাম পরিবর্তিত হইয়া বলেশ্বর হইয়াছে। কচুয়ার সন্নিকটে ভৈরব আসিয়া এই বলেশ্বরে মিশিয়াছে। বলেশ্বর ক্রমে বিষখালি, গানগুচি, কচ, ভোল, পাকাসিয়া প্রভৃতি বহনদীর জলস্রোত লইয়া হরিণঘাটার বিখ্যাত মোহানায় সমুদ্রের আকারে বঙ্গোপসাগরে আত্মোৎসর্গ করিয়াছে। গৌরী পূৰ্ব্বে অত্যন্ত প্রবল ছিল। এমন কি ৬০৭০ বৎসর পূৰ্ব্বে পদ্মার জলোচ্ছাস ইহাকেই প্রধান পথ করিবে বলিয়া আশঙ্কাও হইয়াছিল। কিন্তু হঠাৎ পদ্মার গতিপরিবর্তন জন্য সে আশঙ্কা দূর হইয়াছে। অধিকন্তু গৌরী এক্ষণে হীনবীৰ্য্য হইয়া পড়িয়াছে। যাহা বাকীছিল, কুষ্টিয়ার নিকট রেলওয়ে লাইনের সেতু নিৰ্মাণ হওয়াতে, তাহাও হইয়াছে। এক্ষণে গৌরী স্থানে স্থানে মজিয়া আদিতেছে; বৎসরের কতক সময়ে বড় বড় নৌকা চলাচলেরও শয়ৰি উপস্থিত হয়। তবুও গৌরী মধুমতীই যশোহর খুলনার মধ্যে এক্ষণে স্বৰ্ব্বাপেক্ষা প্রবল নদী। -: