পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস প্রথম খণ্ড.djvu/৪৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిyR যশোহর-খুলনার ইতিহাস । একটি গুপ্ত দুর্গে লুক্কায়িত রাখিয়া স্বয়ং যুদ্ধার্থ প্রস্তুত হইলেন। পর পর দুই দিন যুদ্ধে নবাব সৈন্ত পরাজিত হইল। চণ্ডী ও কেশব জয়োল্লাসে মত্ত হইয় রাজার জনৈক পাঠান সৈন্তকে নবাব-সৈন্ত ভাবিয়া কালী-মন্দিরে বলি দেয় ; তাহার ফলে সমস্ত পাঠান-সৈন্ত বিদ্রোহী হইয়া উঠে। নবাবপক্ষ হইতে রাজার পাঠানসৈন্তগণকে হস্তগত করিবার কোন ব্যবস্থা হইয়াছিল কিনা জানি না । মোট কথা, বাড়ীবাথানের সন্নিকটে উভয় পক্ষে যে তৃতীয় যুদ্ধ হয়, তাহাতে মীরজাফরের মত গয়েশউদ্দীন যুদ্ধে বিরত ছিলেন বলিয়া মুকুট রায় সম্পূর্ণ পরাজিত ও বন্দী হন। বর্ণীকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করিয়া রাজধানীতে লইয়া যাওয়া হয়। সেখানে তাহার বীরত্বের খ্যাতি পূৰ্ব্বেই পৌঁছিয়ছিল। বঙ্গেশ্বর তাহাকে বাধ্যতা স্বীকার করাইয় তাহার রাজ্য প্রতাপণ করেন। কোন রাজবংশের পতন বিবৃত করিতে হইলে, এ দেশের একটা চির প্রচলিত প্রথা আছে। যেখানে প্রকৃত ইতিহাস নিৰ্ব্বাক্, সেখানে একটা মামুলী গল্পের অবতারণা করিয়া পাদপূরণ করা হয় । পাঠান ও মোগল আমলে হিন্দু রাজগণ একটু বিদ্রোহী হইলেই তাহার বিরুদ্ধে নবাব-সৈন্ত আসিত ; ফলে হিন্দুরাজা পরাজিত ও বন্দী হইতেন। বন্দীকে লইয়া যাইবার সময়ে, তাহার সঙ্গে প্রায়ই দুইটি কপোত কপোতী যাইত। ইহা হইতে বুঝা যায়, তখন এই ংবাদবাহী কপোতের বিশেষ ব্যবহার ছিল । বিংশ শতাব্দীর সভ্য ইয়োরোপে সংবাদবাহী কপোত যেমন দুঃসাধ্য সাধন করিতেছে, ৫৭ শত বৎসর পূৰ্ব্বে বঙ্গেও কপোতের সে গুণের সদ্ব্যবহার করা হইত। কিন্তু প্রভেদ এই—বঙ্গীয় কপোতের পরিণামে উপকার না করিয়া সৰ্ব্বনাশই সাধন করিত। হিন্দুর নিকট যুদ্ধে পরাজয় অপেক্ষী যবনহন্তে জাতিকুল নাশই অধিকতর অসহনীয় ছিল। কারণ সে যুগে যবনের সহিত যুদ্ধে পরাজয়ের অর্থই জাতিধৰ্ম্ম নাশ। এ জন্ত বন্দী রাজা সঙ্গে দুইটি পারাবত লইয়া রাজধানীতে যাইতেন, যদি তিনি নিষ্কৃতি লাভ করিতেন, পারাবাত সঙ্গেই থাকিত। আর যদি নিতান্তই তাহার দেহান্ত হইত, তাহা হইলে তিনি পারাবত দুইটি ছাড়িয়া দিয়া মৃত্যুকে আলিঙ্গন করিতেন। পারাবত উড়িয়া বাড়ী ফিরিয়া আসামাত্র জানা যাইত যে রাজার দেহান্ত ঘটিয়াছে ; সুতরাং তাহার পরিবারবর্গ সকলে আত্মহত্যা করিয়া ইতিহাসের পৃষ্ঠা হইতে বংশচিহ্ন মুছিয়া ফেলিতেন। কিন্তু বঙ্গের পারাবতগুলি উড়িয়া আসা ছাড়া অন্ত ।