পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস প্রথম খণ্ড.djvu/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭૨ যশোহর-খুলনার ইতিহাস । পরিবর্তনে তাহাদিগকে টোডরমল্পের সময়ের সুন্দরবনের উত্তর সীমা হইতে আরও উত্তরদিকে যাইতে হইয়াছিল। এতৎসঙ্গে আরও একটি কথা বিবেচ্য। রাজস্বের পরিমাণ ঠিক থাকিলেই, দেশের পরিমাণ ঠিক থাকে না। বিক্রমাদিত্য যে রাজ্যের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব দিবেন স্থির হইয়াছিল, তাহার রাজ্য বৃদ্ধি হইলেও সে রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় নাই। প্রতাপাদিত্যের সময় রাজস্ব বদ্ধ হইয়াছিল, কিন্তু রাজ্যের সীমা নানা দিকে বিস্তৃত হইয়াছিল। সুতরাং দেখা যাইতেছে, সুন্দরবনের উত্তর সীমা অনবরত উত্তরে দক্ষিণে সরিতেছে। বর্তমান সময়ে আবার দেখিতেছি, উক্ত উত্তর সীমার গতি দক্ষিণ দিকেই চলিয়াছে, অর্থাৎ জমি ক্রমশঃ জঙ্গলশূন্ত ও শস্তোপযোগী হওয়ায় আবাদের সঙ্গে সঙ্গে লোকের বসতিও দক্ষিণদিকে বিস্তৃত হইয় পড়িতেছে । সুন্দরবনের উত্থান, পতন বা সীমা পরিবর্তন মানুষের কোন ইচ্ছার অধীন নহে। পূৰ্ব্বে বলা হইয়াছে যে ভাগীরথীর মুখে ভূমি গঠন কাৰ্য বহু প্রাচীন যুগ হইতে চলিয়া আসিতেছিল। সুতরাং সুন্দরবনের সেই পশ্চিমাংশ পূৰ্ব্বাংশ অপেক্ষা অনেক দক্ষিণদিকে অগ্রবর্তী ছিল। সাগরদ্বীপ অতি পুরাতন স্থান। এখন পূৰ্ব্বাংশে ভূমিসঞ্চয়কাৰ্য্য চলিতেছে। পশ্চিমাংশের দক্ষিণ সীমা গত কয়েকশত বৎসরের মধ্যে অধিক দূর অগ্রসর হইয়াছে বলিয়া বোধ হয় না। হয়ত তাহার একটি প্রধান কারণ এই যে, ঐ দিকে দক্ষিণোপকূল হইতে অতলস্পর্শ অধিক দূরবর্তী নহে। পূৰ্ব্বদিকে কিন্তু এই দক্ষিণ সীমা অনেক অগ্রবর্তী হইয়াছে। সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রকুলবৰ্ত্তী অনেক প্রাচীন স্থান ভিতরে পড়িয়া গিয়াছে। এক্ষণে পূর্বে ও পশ্চিমে উভয়াংশে সুন্দরবনের দক্ষিণ সীমা প্রায় একই রেখায় আসিয়া পৌঁছিয়াছে। এ রেথ সম্ভবতঃ অতলম্পর্শের জন্ত আর অগ্রসর হইতে পারিতেছে না। এই অতলম্পর্শ বর্তমান থাকিলে সুন্দরবনের দক্ষিণ সীমা স্থির থাকিতে পারে বটে, কিন্তু অতলস্পশের প্রকোপে দেশে পুনরায় অবনমন সম্ভাবিত হইতে পারে। তাহ হইলে উত্তর সীমা আবার উত্তরদিকে সরিবে, এবং অনেক স্থান হইতে মনুষ্যাবাস আবার উঠিবে। কিন্তু যদি কোন আকস্মিক কারণে অতলম্পৰ্শই পলিরাশিতে পুরিয়া উঠে বা সরিয়া যায়, তাহা হইলে সুন্দরবনও দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হইতে পারে এবং সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিক্ হইতে লোকের বসতি