পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

মজবুত নয়, বাড়ির অধিকাংশ কাঠের। আমাদের দেশে এ রকম বাড়ি হলে বোধ হয় উইয়ে হজম করে ফেলে, বাতাসের ফুঁয়ে উড়ে যায়। যা হোক, এখানকার ঘরদুয়ারগুলি বেশ পরিষ্কার করে রাখে; বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলে আর কোথাও এক তিল ধুলো দেখবার জো নেই, মেঝের সর্বাঙ্গ কার্পেট প্রভৃতি দিয়ে মোড়া, সিঁড়িগুলি পরিষ্কার তক্ তক্ করছে কোথাও একটুখানি দাগ নেই। আমাদের দেশের পরিষ্কারের সঙ্গে এখানকার পরিষ্কারের অনেকটা তফাত আছে। শিল্পজ্ঞান সৌন্দর্যজ্ঞান থেকে এখানকার লোকদের পরিষ্কার ভাবের জন্ম, আমাদের পরিষ্কার-ভাব বলে যেন একটা স্বতন্ত্র মনোবৃত্তি আছে। চোখে দেখতে খারাপ হলে এরা সইতে পারে না। প্রতি সামান্য বিষয়ে এদের ভালো দেখতে হওয়াটা প্রধান আবশ্যক। প্রতি পদে এরা সৌন্দর্যচর্চা করে। এখানকার পুরুষেরা টুপি খুলে সম্মান প্রদর্শন করে, কিন্তু এমন করে খোলে যাতে সেই সামান্য টুপি খোলাতেও শ্রী প্রকাশ পায়। বিশেষতঃ এখানকার মেয়েরা প্রতি হাত পা নাড়ায় শ্রীর প্রতি লক্ষ করে। কিছু নেবার জন্যে হাত বাড়ালে এমন করে বাড়ায় যাতে সুন্দর দেখায়, খাবার সময়ে এতটুকু মুখ মোছে যাতে খারাপ না দেখায়, পাছে লম্ব। পদক্ষেপ হয় ব’লে বিবিদের এক রকম নতুন ফেসানের কাপড় উঠেছে তাতে তাদের হাঁটুর কাছটা বাঁধা থাকে। এমন-কি আমি সম্প্রতি দুই-একটা কাগজে দেখতে পাই, একজন কাপড়ওয়ালা খুবভালো-দেখতে mourning dressএর বিজ্ঞাপন দিয়েছে, শোকবস্ত্রও সুশ্রী দেখতে হওয়া আবশ্যক। দোকান থেকে যা-কিছু জিনিস আসে তা সুশ্রী করে মোড়া থাকে, দোকানদারেরা এ রকম করে মোড়ার খরচটা অপ্রয়োজনীয় মনে করে না— যা দুদণ্ডের বেশি ব্যবহার করতে হবে না তাও সুন্দর দেখতে হওয়া আবশ্যক। এই

৮৬