পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

হয়েছে। কিন্তু তাতে কী হানি, দেখতে তো কিছু খারাপ দেখাচ্ছে না। এখানকার লোকেরা কিছু অপরিষ্কার নয়; আমাদের দেশে যাকে ‘নোংরা' বলে, তাই। আমাদের দেশের পরিষ্কার ও এখানকার পরিষ্কারের একটা মিলন হলেই বেশ সর্বাঙ্গসুন্দর মিলন হয়। ভালো দেখতে হওয়ার প্রতি আমাদের অত্যন্ত কম লক্ষ; কিন্তু তার প্রধান কারণ আমরা গরিব। শিল্পের দিকে মনোযোগ দেবার আমাদের অবসর নেই। এখানে পরিষ্কার ভাবের যে অভাব আমরা দেখতে পাই, সে অনেকটা শীতের জন্যে। আমরা, যে-কোনো জিনিস হোক্‌-না কেন, জল দিয়ে পরিষ্কার না হলে পরিষ্কার মনে করি নে। এখানে অত জল নিয়ে নাড়াচাড়া পোষায় না। তা ছাড়া শীতের জন্য এখানকার জিনিসপত্র শীঘ্র ‘নোংরা’ হয়ে ওঠে না। আমাদের দেশে প্রায় সর্বদা গা খোলা থাকে, তা ছাড়া গর্মিতে এমন অপরিষ্কার হয়ে উঠতে হয় যে, না নাইলে তিষ্ঠোবার জো নেই। এখানে শীতে ও গায়ের আবরণ থাকাতে শরীর তত অপরিষ্কার হয় না। এখানে জিনিসপত্র পচে ওঠে না। এই রকম পরিষ্কারের পক্ষে নানা বিষয়ে সুবিধে। আমাদের দেশে যে রকম পরিষ্কারের ভাব আছে, তেমনি পরিষ্কার হওয়ার বিষয়ে অনেক কুসংস্কারও আছে। মনে করো আমাদের দেশের পুষ্করিণীতে কী না ফেলে? সে তৈলাক্ত অপরিষ্কার জলকুণ্ডে স্নান করলে আবার স্নান করবার আবশ্যক হয়। তেল মেখে জলে দুটো ডুব দিলেই আমরা গা সাফ হল মনে করি। আমরা নিজের শরীর ও খাওয়াদাওয়।—সংক্রান্ত জিনিসের বিষয়ে বিশেষ পরিষ্কার থাকি, কিন্তু ঘর হুয়ার যথোচিত পরিষ্কার করি নে। আমাদের চার দিক এই রকম অপরিষ্কার থাকে বলে আমাদের স্বাস্থ্যও খারাপ। যা হোক, এ বিষয়ে আর অধিক বক্তৃতা দেব না। অন্যান্য দুই-এক কথা বলি।

৮৮