পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

মনের কোনোখানে এক তিল আঁচড় পড়ে নি। খুব ভালো মানুষ, সর্বদাই হাসি খুশি গল্প। কাপড়-চোপড়ের আড়ম্বর নেই— কোনো প্রকার ভাণ নেই; অত্যন্ত শাদাসিদে।

 ডাক্তার Mএর বাড়িতে একদিন আমাদের সান্ধ্যনিমন্ত্রণ হল। এখানকার নেমন্তন্নে আমাদের দেশের মতো খাওয়াই মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। লোকের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় গান-বাজনা আমোদ-প্রমোদের জন্যই দশ জনকে ডাকা হয়। আমরা সন্ধ্যের সময় গিয়ে হাজির হলুম। একটি ছোটো ঘরে অনেকগুলি মহিলা ও পুরুষের সমাগম হয়েছে। ঘরে প্রবেশ করে কর্তা-গিন্নিকে আমাদের সম্মান জানালুম। সমাগত লোকদের সঙ্গে যথাযোগ্য অভিবাদন সম্ভাষণ ও আলাপ হল। ঘরে জায়গার এত টানাটানি ও লোক এত বেশি যে চৌকির অত্যস্ত অভাব হয়েছিল; অধিকাংশ পুরুষে মিলে আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প জুড়ে দিয়েছিলুম। নতুন কোনো অভ্যাগত মহিলা এলে গিন্নি কিম্বা কর্তা তাঁর সঙ্গে আমাদের আলাপ করে দিচ্ছেন, আলাপ হবা মাত্র তাঁর পাশে গিয়ে একবার বসছি কিম্বা দাঁড়াচ্ছি ও হুই একটা করে কথাবার্তা আরম্ভ করছি। প্রায় weather নিয়ে কথা আরম্ভ হয়; মহিলাটি বললেন, ‘Dreadful weather!’ সে বিষয়ে তাঁর সঙ্গে আমার সম্পূর্ণ মতের ঐক্য হল। তার পরে তিনি অনুমান করলেন যে আমাদের পক্ষে অর্থাৎ Indianদের পক্ষে এমন weather বিশেষ trying ও আশা করলেন আকাশ শীঘ্র পরিষ্কার হয়ে যাবে ইত্যাদি। তার পরে এই সূত্রে নানা কথা উঠল আর-কি। সভার মধ্যে দুইজন সুন্দরী উপস্থিত ছিলেন, বলা বাহুল্য যে তাঁরা জানতেন তাঁরা সুন্দরী। বিলেতে আত্মসৌন্দর্যঅনভিজ্ঞা যুবতী দেখবার জো নেই! এখানে সৌন্দর্যের পুজো হয়; এখানে রূপ কোনোমতে গুপ্ত থাকতে পারে না, রূপাভিমান সুপ্ত

৯২