পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষষ্ঠ পত্র

তিনি অনুবাদটা শুনে আমাকে স্পষ্ট জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমাদের দেশে প্রেমের স্বাধীনতা আছে নাকি!’ ভারতবর্ষের লোকেরা হ্যাট কোট পরে কি না, জ’ন্মে অবধি ইংরিজি কয় কি না ও শীতকালে কখনো বরফের ওপরে skate করে কি না যিনি জানতেন না, তিনি এ খবরটি কোথা থেকে পেয়েছেন! আমি তো মুশকিলে পড়ে গেলুম, নতশিরে দুই-একটা অ্যাঁ-য়োঁ করলুম আর-কি! যা হোক, সেই সন্ধ্যের মধ্যে আমাকে দুবার গান করতে হয়েছিল। এই রকম গানবাজানা গল্পসল্প চলতে লাগল। কতকগুলি রোমের ভগ্নাবশেষের ফোটোগ্রাফ ছিল, সেইগুলি নিয়ে গৃহকর্ত্রী কতকগুলি অভ্যাগতকে জড়ো করে দেখাতে লাগলেন। ডাক্তার M একটা telephone কিনে এনেছেন, সেইটি নিয়ে তিনি কতকগুলি লোকের কৌতূহল তৃপ্ত করছেন। পাশের ঘরে টেবিলে খাবার সাজানো আছে। এক-একবার গৃহকর্তা এসে এক-একজন পুরুষের কানে কানে বলে যাচ্ছেন, Miss অথবা Mrs. অমুককে supper-স্থানে নিয়ে যাও; তিনি গিয়ে সেই মহিলার কাছে তাঁকে খাবার ঘরে নিয়ে যাবার অনুমতি প্রার্থনা করলেন ও তাঁর বাহু গ্রহণ করে তাঁকে পাশের ঘরে আহারস্থলে নিয়ে গেলেন। এ রকম সভায় সকলে মিলে একেবারে খেতে যায় না, তার কারণ তা হলে আমোদ-প্রমোদের স্রোত অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। একে একে সকলের খাওয়া হয়ে যায়। এই রকম একসঙ্গে পুরুষ মহিলা সকলে মিলে গানবাজনা গল্প আমোদপ্রমোদ আহারাদিতে একটা সন্ধ্য। কাটানো গেল।

 আমরা একটা কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান বা উৎসবের সময়েই লোকজন একত্রে ডেকে খাওয়াদাওয়া করি। আমাদের মধ্যে পরস্পর মিলনের উপলক্ষ্য খুব কম। তা ছাড়া, যাঁদের সভার অধিষ্ঠাত্রী করা উচিত সেই মহিলারাই আমাদের নিমন্ত্রণসভায়

৯৭