বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষষ্ঠ পত্র

পুরুষে একত্রে মিলে আমোদপ্রমোদ করাই তো স্বাভাবিক। মেয়েরা তো মনুষ্যজাতির অন্তর্গত, ঈশ্বর তো তাদের সমাজের এক অংশ করে সৃষ্টি করেছেন। মানুষে মানুষে আমোদপ্রমোদে মেশামেশি করাকে একটা মহাপাতক, সমাজ বিরুদ্ধ, রোমাঞ্চজনক ব্যাপার করে তোলা শুদ্ধ অস্বাভাবিক নয়, তা অসামাজিক, সুতরাং এক হিসেবে অসভ্য। পুরুষেরা বাইরের সমস্ত আমোদপ্রমোদে লিপ্ত রয়েছে, আর মেয়েরা তাদের নিজস্ব সম্পত্তি একটা পোষা প্রাণীর মতো অন্তঃপুরের দেয়ালে শৃঙ্খলে বাঁধা আছে। এক দল বুদ্ধিমান বিবেচনাশক্তিবিশিষ্ট জীবকে কত শত শতাব্দী হতে নির্দয় লোকাচারের শাসন পীড়ন দমন বন্ধন করে করে পোষা জন্তুর চেয়ে নির্জীব বশীভূত সংকুচিত সংকীর্ণমন করে তোলা হয়েছে, সে একবার ভালো করে কল্পনা করে দেখতে গেলে সর্বাঙ্গ শিউরে ওঠে। কোনো একজন মানুষের ’পরে এ রকম সম্পূর্ণ একাধিপত্য করা— একজন বুদ্ধি ও হৃদয় -বিশিষ্ট মানুষকে জন্তুর মতো, এমন-কি, তার চেয়ে অধম একটা ব্যবহার্য জড়পদার্থের মতো সম্পূর্ণরূপে নিজের প্রয়োজনের জিনিস করে তোলা— যদি তার এক তাল সুখের জন্যে তোমার এক তিল সুখের ব্যাঘাত হয় তা হলে সেটুকুও উচ্ছিন্ন করে দেওয়া— যদি তোমার ক্ষণস্থায়ী সুখের জন্যে তাকে চিরস্থায়ী কষ্ট পেতে হয় তবে তাও অম্লানবদনে তার স্কন্ধে স্থাপন করা— এ-সকল যদি পাপ না হয় তবে নরহত্যা করাও পাপ নয়; সমাজের অর্ধেক মানুষকে পশু করে ফেলা যদি ঈশ্বরের অভিপ্রেত বলে প্রচার করো তা হলে তাঁর নামের অপমান করা হয়। মেয়েদের সমাজ থেকে নির্বাসিত করে দিয়ে আমরা কতটা সুখ ও উন্নতি থেকে বঞ্চিত হই তা বিলেতের সমাজে এলে বোঝা যায়। আমরা অনেক জিনিস না দেখলে দূর থেকে কল্পনা করতে পারি

৯৯