পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষষ্ঠ পত্র

সাজগােজ করে গিয়েছিলেন। অনেকেই গলায় লাল ফাঁসি (necktie) বেঁধে এয়েছিলেন, অন্যের গলায় ফাঁসি লাগানাে তাঁদের আন্তরিক অভিপ্রায়; আর ম— মহাশয় স্বয়ং তাঁর neck-tieএ একটি তলবারের আকারের পিন গুঁজে এয়েছিলেন। আমাদের মধ্যে একজন তাঁকে ঠাট্টা করে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘দেশের সমস্ত tieএ যে তলবারের আঘাত করা হয়েছে, ওটা কি তারই বাহ্য লক্ষণ?’ তিনি হেসে বললেন ‘তা নয় গাে, বুকের কাছে একটা কটাক্ষের ছুরি বিঁধেছে, ওটা তারই চিহ্ন।’ দেশে থাকতে বিঁধেছিল কি এখানে বিঁধেছে তা কিছু বললেন না। ম— মহাশয়ের হাসি-তামাশার বিরাম নেই; সে দিন তিনি নৌকার সমস্ত লোকের সঙ্গে সমস্ত দিন ঠাট্টা ও গল্প করে কাটিয়েছিলেন। একবার তিনি সমস্ত মহিলাদের হাত দেখে গুনতে আরম্ভ করেছিলেন— তখন তিনি এত হাস্যজনক কথা বলেছিলেন ও বােট-সুদ্ধ মহিলাদের এত প্রচুর পরিমাণে হাসিয়েছিলেন যে, সত্যি কথা বলতে কি, তাঁর উপর আমার মনে মনে একটুখানি দ্বেষের উদ্রেক হয়েছিল। বােট-সুদ্ধ মেয়ে যখন হেসে গড়াগড়ি যাচ্ছিলেন, তখন আমি এবং আর দুই-চারিটি পুরুষ অত্যন্ত গম্ভীর ভাবে দাঁড়িয়েছিলেম। যথাসময়ে বােট ছেড়েছিল। নদী এত ছােটো যে, আমাদের দেশের খালের কাছাকাছি পৌঁছয়। জায়গায় জায়গায় নদীর ধারের দৃশ্য মন্দ নয়, কিন্তু সবসুদ্ধ জড়িয়ে যে বিশেষ সুন্দর দেখতে তা নয়। নৌকোর মধ্যে আমাদের আলাপ পরিচয় গল্পসল্প চলতে লাগল। একজন ইংরেজের সঙ্গে আমাদের একজন দিশি লােকের ধর্মসম্বন্ধীয় তর্ক উঠল। আমাদের সঙ্গে একজনের আলাপ হল, তিনি তাঁদের ইংরিজি সাহিত্যের কথা তুললেন; তাঁর শেলীর কবিতা অত্যন্ত ভালাে লাগে, সে বিষয়ে

১০৩