পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষষ্ঠ পত্র

রেখেছিলেম যে, দেশে এ কথা রাষ্ট্র করে দেব; তিনি তখন বিশ্বাস করেন নি। তুমি এক কাজ কোরো তো— বিকেলে সেই ঘরটাতে যখন তোমাদের পাশার বৈঠক বসবে তখন তামাকের ধোঁয়ার সঙ্গে এই কথাটা ঘরের চারি দিকে বিস্তার করে দিয়ো। কিম্বা তা যদি না কর তোত বিশ্বম্ভর দাদাকে এই কথাটা অতি গোপনে বোলো ও কাউকে বলতে বিশেষ করে বারণ কোরো, তা হলেই সপ্তাহের মধ্যে সকলের কানেই উঠবে। যা হোক, সে দিন আমরা বৃষ্টিতে তিনচার বার করে ভিজেছিলেম। এই রকম ভিজতে ভিজতে আমরা আমাদের গম্য স্থানে গিয়ে পৌঁছলেম। তখন বৃষ্টি থেমে গেছে, কিন্তু আকাশে মেঘ আছে ও জমি ভিজে। মাঠে নেবে আমাদের খাওয়াদাওয়া করবার কথা ছিল, কিন্তু আকাশের ভাবগতিক দেখে তা আর হল না। খাবার সময় দেখি, আহারের অত্যন্ত বিস্তৃত আয়োজন। আমাদের partyর যিনি প্রধান তিনি আমার অল্প খাওয়া দেখে বললেন যে, আমার picnicএর উপযুক্ত ক্ষিধে নেই; কিন্তু তাঁর খাওয়ার পরিমাণ থেকে যদি picnicএর উপযুক্ত ক্ষিধের পরিমাণ অনুমান করে নিতে হয় তা হলে, আমি যদি গাছের পাতা ও হত্তুকি খেয়ে অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে সহস্র বৎসর উপরে পা ও নীচে মাথা রেখে বৃকোদর ও অগস্ত্যমুনির আরাধনা করি তবু আমার picnicএর উপযুক্ত ক্ষিধে হয় না। খাওয়াদাওয়ার পর আমরা নৌকা থেকে নেবে বেড়াতে বেরলেম। কোনো কোনো প্রণয়ীযুগল একটি ছোটো নৌকা নিয়ে দাঁড় বেয়ে চললেন, কেউ বা হাতে হাতে ধরে নিরিবিলি কানে কানে কথা কইতে কইতে মাঠে বেড়াতে লাগলেন। আমাদের সঙ্গে একজন ফোটোগ্রাফওয়ালা তার ফোটোগ্রাফের সরঞ্জাম সঙ্গে করে এনেছিল, আমরা সমস্ত দল মাঠে দাঁড়ালেম— আমাদের ফোটোগ্রাফ নেওয়া হল। সে যন্ত্রে এক

১০৫