পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

সেকেণ্ডের মধ্যে ফোটোগ্রাফ নেওয়া যায়, সুতরাং একটু-আধটু নড়লে-চড়লেও বড়ো একটা হানি হয় না। সহসা ম—মহাশয়ের খেয়ালে গেল যে আমরা যতগুলি কৃষ্ণমূর্তি আছি একত্রে সকলের ছবি নেওয়া হবে। আমাদের মধ্যে দুই-একটি জন-বৃষের পুষ্যি বাছুর ছিলেন, তাঁরা এ প্রস্তাবে ইতস্ততঃ করতে লাগলেন— পাছে কৃষ্ণমূর্তির দলের মধ্যে তাঁরাও পড়েন। কিন্তু এরকম একটা ‘invidious distinction’ করা তাদের মনঃপূত নয়। কিন্তু ম— মশায় ছাড়বার পাত্র নন; তিনি ধরে বেঁধে দাঁড় করিয়ে আমাদের ছবি নেওয়ালেন। যা হোক, ছবি নেওয়া প্রভৃতি সাঙ্গ হলে পর নৌকা লন‍্ডন-অভিমুখে ছাড়া হল। তখন ভগবান মরীচিমালী তাঁহার সহস্ররশ্মিসংযমনপুরঃসর অস্তাচলচূড়াবলম্বী কনকজলধরপটল-শয়নে বিশ্রান্ত মস্তক বিন্যাস-পূর্বক অরুণবর্ণ নিদ্রাতুর লোচন মুদ্রিত করিলেন; বিহগকুল স্ব স্ব নীড়ে প্রত্যাবর্তন করিল; গাভীবৃন্দ হম্বারব করিতে করিতে গোপালের অনুবর্তন করিয়া গোষ্ঠাভিমুখে গমন করিতে লাগিল। আমরা লন‍্ডনের অভিমুখে যাত্রা করলেম। আমরা এক গাড়িতে কতকগুলি দিশিলোক ছিলেম ও আমাদের সঙ্গে একজন ইংরেজ পুরুষ ও ইংরেজ মহিলা ছিলেন। ম— মহাশয় আমাদের সঙ্গে ছিলেন, সুতরাং আমাদের হাসি-তামাশার আর অন্ত ছিল না। এইখানে তোমাকে একটা ঘোরতর গুপ্ত খবর দিচ্ছি, খবরদার আর কাউকে বোলো না। গাড়িতে আমাদের চ— মহাশয়ের রকম-সকম যদি দেখতে তবে অবাক হয়ে যেতে। মিস ড—য়ের সঙ্গে তিনি যে রকম ফিস্ ফিস্ করে কথাবার্তা আরম্ভ করে দিলেন, মাঝে মাঝে তাঁর মুখের ’পর যে রকম ভাবপূর্ণ দৃষ্টিপাত করতে লাগলেন ও ঠিক তাঁর পাশে যে রকম চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে নিলেন, যে, তাতে ক— মহাশয় ম— মহাশয় ও র— মহাশয়ের মধ্যে একটা

১০৬