পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপ্তম পত্র

আমাদের দেশের রুচি এখনও এমন বিকৃত হয়ে যায় নি, দেশীয় লোকের মন এমন পশুত্বে পরিণত হয় নি, তাঁদের দৃষ্টি এমন ‘পিঙ্গল’ হয়ে যায় নি ও তাঁদের ‘কল্পনার দূরবীক্ষণ’ এত দূর পর্যন্ত বিগড়ে যায় নি যে তাঁরা ‘আমোদ-প্রমোদ’ ও ‘মেলা-মেশা’ মাত্রেরই মধ্যে একটা হীন, একটা জঘন্য, একটা বীভৎস ভাব দেখতে পান।[১] অতএব যদি ‘আমোদ-প্রমোদ’ ও ‘মেলা-মেশা’ মাত্রেরই খারাপ অর্থ না থাকে ও ‘পরপুরুষ’ মাত্রেই যদি বাঘ ভাল্লুক বা চোর ডাকাত না হয় তা হলে ‘পরপুরুষের’ সঙ্গে ‘আমোদ-প্রমোদ’ ‘মেলা-মেশায়’ কী দোষ আছে? একজন অন্যায়রূপে কারাবদ্ধ ব্যক্তিকে স্বাধীনতা দেবার বিরুদ্ধে তুমি তো বলতে পারো যে, ‘এ স্বাধীনতা আত্মারও স্বাধীনতা নহে, দেশেরও স্বাধীনতা নহে, কেৱল স্বজাতিবর্গের সহিত এক ব্যক্তির আমোদ-প্রমোদে মেলা-মেশা— এ কতদূর স্বাধীনতা নামের যোগ্য তাহাই সন্দেহস্থল!’ আত্মার স্বাধীনতা ও দেশের স্বাধীনতা ব্যতীতও আরও অসংখ্য স্বাধীনতা আছে যা প্রার্থনীয়।[২] উপসংহারে সম্পাদক-মহাশয় বলেছেন যে, স্ত্রীগণকে অন্তঃপুরে রাখা পুরুষদের স্বার্থপরতার ফল নয়, সাংসারিক কাজকর্মের অনুরোধে তা স্বভাবতই হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্ত্রীস্বাধীনতাবিরোধীদের এই এক অতি পুরোনো যুক্তি আছে; কিন্তু আমার বোধ হয় এটা আর কারও চক্ষে আঙুল দিয়ে দেখাতে হবে না যে, প্রাচীরবদ্ধ অন্তঃপুরের মধ্যে চিরকালের জন্যে প্রবেশ করা ও সমস্ত পৃথিবীর থেকে আপনাকে রুদ্ধ করে রাখা স্বাভাবিক হওয়াই নিতান্ত অস্বাভাবিক।[৩] যদি সত্যই স্বাভাবিক হত তা হলে য়ুরোপে কেন এ স্বভাবের নিয়মের পরিবর্তন হল? এখানে কি স্ত্রীলোকদের স্বামী নেই, না সন্তান হলেই তারা গঙ্গাসাগরে বিসর্জন দিয়ে আসে? লেখক-মহাশয় বলেন ‘কুলরমণীরা যে যে-সে পুরুষের সঙ্গে আমোদ

১১৫
  1.  
  2.  
  3.