পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র



১২৬

    গৃহিণী কোনো অভ্যাগত ব্যক্তির অতিথিসৎকার করিলে তাহা আমাদের দেশাচারের চক্ষে ভালো বৈ মন্দ দেখিতে হয় না। বোম্বাই প্রদেশে এইরূপ প্রথা অদ্যাপি প্রচলিত আছে। ভা. স.

    যে-সে লোকের সহিত আমোদ-প্রমোদ করিয়া বেড়ানো, সর্বদাই হউক আর কদিচ কখনোই হউক, তাহা কুলস্ত্রীকে শোভা পায় না— যে-সে লোক বলিলে সুদ্ধ যে কেবল দুষ্ট লোকই বুঝায়, সুদ্ধ যে কেবল অভদ্র লোকই বুঝায়, সুদ্ধ যে কেবল পথের লোকই বুঝায় তাহা নহে। শান্তশিষ্ট লোক বলো, ভদ্র লোক বলো, পরিচিত লোক বলো, অবস্থা-বিশেষে সকলেই যে-সে লোকের মধ্যে পরিগণিত হইতে পারেন। লোকটি ভদ্রবংশীয়, লেখাপড়া জানে, কথাবার্তা বেশ, ভদ্র আচার ব্যবহার, আমার পরিচিত এই পর্যন্ত— কিন্তু আমি তাহার ধর্মাধর্ম এবং চরিত্রের জন্য দায়ী নহি—এমন যে ব্যক্তি ইনিও এক হিসাবে যে-সে লোকের মধ্যে ধর্তব্য। কোন্ হিসাবে? না, যখন তাঁহাকে অন্তঃপুরের স্ত্রীগণের সহিত আলাপ করাইয়া দিবার কথা। যাহার সহিত সবে নূতন আলাপ হইয়াছে তাহার সহিত হাত ধরাধরি করিয়া নাচিতে স্ত্রীজনের যদি কোনো বাধা না থাকে তবে যে-সে লোকের সহিত আমোদপ্রমোদ করিয়া বেড়াইতে যে কিসের বাধা, তাহা বুঝা যায় না— সকল সময়েই তো কিছু আর আমোদ-প্রমোদ দোষে কলঙ্কিত হয় না। ভা স.

    কুলস্ত্রীরা যে পরপুরুষদিগের সহিত বেশি মেলা-মেশা ও আমোদপ্রমোদ করে না তাহার কারণ অনেকগুলি। যথা—
     ১ পাছে কুলোকে কু ভাবে, যাহাকে খুব ভালো বলিয়া জানা আছে তাঁহারও অন্তঃকরণ কু হইবার আটক নাই।
     ২ পাছে সুলোকে কু ভাবে, ইহাতেও আটক নাই। পরস্ত্রী পরপুরুষে মেলা-মেশা কতটুকু পর্যন্ত শোভা পায় তাহার একটা মাত্রা রাজনিয়ম-দ্বারা আজি পর্যন্তও নির্ধারিত হয় নাই। আমি যাহা দেখিয়া বলিব ‘ইহাতে দোষ নাই’ আর-একজন বলিবে ‘এতটা ভালো নয়’। সেক্সপিয়রের উইণ্টরস্ টেলের হরমিওনী বেচারির ও তাঁহার স্বামীর দুর্দশা বিবিসাহেবদিগকে বিলক্ষণই ভোগ করিতে হয়, কিন্তু কী করিবেন? দুর্জয় দেশাচার—সুতরাং নাচার!