পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অষ্টম পত্র

তাঁদের কাজ। এই রকম ফড়িঙের মতো ঘাসে ঘাসে লাফালাফি করে তাঁদের জীবনের বসন্তকাল কাটে। এঁরাই হচ্ছেন fashionable মেয়ের দল। আমি দেশে থাকতে এখানকার মেয়েদের যে রকম মনে করেছিলুম, এখেনে এসে তার সঙ্গে ঢের তফাত দেখছি। আমাদের দেশে যেমন ছেলেবেলা থেকে মেয়েদের বিয়ের জন্যে প্রস্তুত করে, লেখা পড়া শেখায় না, কেননা মেয়েদের আফিসে যেতে হবে না— এখেনেও তেমনি মার্ঘি দরে বিকোবার জন্যে মেয়েদের ছেলেবেলা থেকে পালিশ করতে থাকে, বিয়ের জন্যে যতদূর লেখা পড়া শেখা দরকার ততদূর শেখায়, তার বেশি শেখায় না, কেননা তাদের তো আফিসে যেতে হবে না! একটু গান গাওয়া, একটু পিয়ানো বাজানো, ভালো করে নাচা, খানিকটা French, একটু বোনা ও শেলাই করা জানলে, একটি মেয়েকে বিয়ের দোকানের জানলায় সাজিয়ে রাখবার উপযুক্ত বেশ একটি রঙচঙে পুতুল গড়ে তোলা হয়। এ বিষয়ে একটা দিশি পুতুল ও একটা বিলিতি পুতুলের যতটুকু তফাত, আমাদের দেশের ও এ দেশের মেয়েদের মধ্যে ঠিক ততটুকু তফাত মাত্র। দিশি পুতুলের অত সাজগোজ রঙচঙের আবশ্যক করে না, আমাদের দিশি মেয়েদের পিয়ানো ও অন্যান্য টুকিটাকি শেখবার আবশ্যক করে না— বিলিতি পুতুলের কিছু বাহার আবশ্যক করে, বিলিতি মেয়েদেরও অল্পস্বল্প লেখাপড়া শিখতে হয়—কিন্তু দুইই দোকানে বিক্রি হবার জন্যে তৈরি হয়। এখেনেও পুরুষেরাই হর্তাকর্তা, স্ত্রীরা তাদের সম্পত্তি। যেমন গাড়ি চালাবার জন্যে ঘোড়া আবশ্যক করে তেমনি সংসার চালাবার জন্যে একটা স্ত্রীর দরকার, স্ত্রী একটি আবশ্যক জিনিসপত্রের মধ্যে। স্ত্রীকে আজ্ঞা করা, স্ত্রীর মনের মুখে লাগাম লাগিয়ে নিজের ইচ্ছেমত চালিয়ে বেড়ানো স্বামীরা ঈশ্বরনির্দিষ্ট অধিকার মনে করেন।

১৩৩