পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

করা হয়। এখানকার মধ্যবিৎ শ্রেণীর মেয়েরা বিদ্যাচর্চার দিকে ততটা মনোযোগ দেন না, তাঁদের স্বামীরাও তার জন্যে বড়ো দুঃখিত নন, তাঁদের জীবন হচ্ছে কতকগুলি ছোটোখাটো কাজের সমষ্টি। যা হোক, সমস্ত দিন এই রকম ছেলেদের দেখাশুনা ক’রে, কাপড় বুনে, visitorদের সঙ্গে কথাবার্তা করে কেটে যায়। সন্ধ্যে বেলায় স্বামী কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে এলেন, স্ত্রীর কাছ থেকে একটি আদরের চুম্বন উপার্জন করলেন (পরিবারবিশেষে যে তার অন্যথা হয় তা বলাই বাহুল্য)—ঘরে তাঁর জন্যে আগুন জ্বালানো আছে, খাবার সাজানো আছে। সন্ধ্যে বেলায় স্ত্রী হয়তো একটা সেলাই নিয়ে বসলেন, স্বামী তাঁকে একটি নভেল চেঁচিয়ে পড়ে শোনাতে লাগলেন, সুমুখে আগুন জ্বলছে, ঘরটি বেশ গরম, বাইরে হয়তো বৃষ্টি হচ্ছে, জানলা-দরজাগুলি বন্ধ। হয়তো স্ত্রী পিয়ানো বাজিয়ে স্বামীকে খানিকটা গান শোনালেন। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী—courtshipএর সময় স্ত্রীর গলা অত্যন্ত ভালো লাগত, কিন্তু বিয়ের পর স্ত্রীর গান শুনতে খুব কম লোকের আগ্রহ হয়। রোজ রোজ সেই একই রকম গলা, একই ধাঁচের গান, শুনে খুব কম লোকেরই অরুচি না জন্মায়। গিন্নির গলা নেমন্তন্নের দিন কাজে লাগে; দশজন বন্ধুবান্ধবকে ডিনারে নেমন্তন্ন করলে যেমন টেবিল সাজাবার জন্যে অনেক জিনিস সিন্দুক থেকে বেরোতে থাকে যা সচরাচর ব্যবহার করা হয় না, তেমনি সেদিন স্ত্রীরও গলা বেরোয়। এখানকার মধ্যবিৎ শ্রেণীর গিন্নিরা এই রকম সাদাসিদে, যদিও তাঁরা ভালো করে লেখাপড়া শেখেন নি তবু তাঁরা অনেক বিষয় জানেন এবং তাঁদের বুদ্ধি যথেষ্ট পরিষ্কার। এ দেশে কথায়-বার্তায় জ্ঞানলাভ করা যায়। তাঁরা অন্তঃপুরে বদ্ধ নন; বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে কথাবার্তা কন, আত্মীয়-

১৩৬