পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পত্র

তা অন্ধভাবে খাটাতে পারবে; তাতে সমাজের কোনো আপত্তি নেই। আমাদের শাস্ত্রে বলে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা[১] পিতৃতুল্য, কনিষ্ঠ ভ্রাতা পুত্রতুল্য; শুনে শুনে অভ্যেস হয়ে গেছে বলে ও আমাদের দেশে এই রকম একটা ভাব বর্তমান আছে বলে এর হাস্যজনকতা ঘুচে গিয়েছে, নইলে এর চেয়ে অদ্ভুত আর কী হতে পারে? ভ্রাতা কি ভ্রাতার তুল্য হতে পারে না? সংসারে কি পিতা পুত্র ছাড়া আর কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই? ভাই ভাইয়ের মধ্যে ভ্রাতৃভাব বলে কি একটা ভাব বর্তমান নেই? কোনো প্রকারে কান ধরে ভাইয়ের সম্পর্ক কি পিতা পুত্রের সম্পর্কের সঙ্গে মেলাতে হবেই? এমন যন্ত্রণাও তো দেখি নি। তা হলে তো তুমি বলতে পারো হাত মাথার তুল্য; কিন্তু আমি বলি ও রকম তুলনার স্পৃহাটি পরিত্যাগ করে হাতকে হাতের স্থানে ও মাথাকে মাথার স্থানে স্ব স্ব কাজে বজায় রাখা হোক। প্রকৃতি যা করে দিয়েছে সেটাকে ভেঙেচুরে মুচড়ে একটা বিকৃতাকার করে তুলো না। আমাদের দেশের শাস্ত্র যেমন (শাস্ত্র বোধ হয় সকল দেশেই সমান) আজ্ঞা করে, বুঝিয়ে বলে না— ভয় দেখায়, কারণ দেখায় না— আমাদের গুরুলোকেরাও তাই করেন। তাঁরা প্রতিপদে কারণ না দেখিয়ে আজ্ঞা করেন, ছোটো যদি একবার জিজ্ঞাসা করে ‘কেন?’ তা হলে তাঁরা চোখ রাঙিয়ে বলেন, ‘হাঁ, এত বড়ো স্পর্ধা!’ এতে যে ছোটোদের মনের একেবারে সর্বনাশ হয় তা তাঁরা বোঝেন না। একটা ঘোড়া কিম্বা এক পাল গোরুকে অবিচারে যেখানে ইচ্ছে চালিয়ে বেড়াও তাতে হানি নেই, কেননা তাতে বড়ো জোর তাদের শরীরের কষ্ট হবে, কিন্তু তাতে তাদের মনোবৃত্তির বিকাশ ও বিচারশক্তি-পরিস্ফুটনের কোনো ব্যাঘাত হবে না। কিন্তু কোনো মানুষকে সে রকম কোরো না, বিশেষতঃ তোমার নিজের ভাই

১৪৭
  1.