পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

নিজের ছেলেকে। তুমি নিশ্চয় জেনো যে, ছেলেবেলা, আমাদের মন খুব কোমল থাকে, তখন থেকে যদি আমরা ক্রমাগত যুক্তিবিহীন আজ্ঞা পালন করে আসতে থাকি, বড়ো লোক বলছেন বলেই দ্বিরুক্তি না করে সব কথা আমাদের শিরোধার্য করে নিতে হয়, তা হলে বড়ো হলেও আমাদের মনের সে অস্বাভাবিক অভ্যাস দূর হয় না, প্রশ্ন করার স্বভাবটা একেবারে চলে যায় আর সে রকম মনে কুসংস্কার অতি শীঘ্র আপনার শিকড় বিস্তার করতে পারে।[১] আমাদের দেশের শিক্ষিত লোকদের একবার দেখো-না— তাঁরা অনেক পড়েছেন, কিন্তু তবু নিজের একটা স্বাধীন মত প্রকাশ করতে তাঁদের কেমন সাহস হয় না। যদি মিল কিম্বা স্পেন‍্সেরের নাম করে তাঁদের নিতান্ত একটা আজগুবি কথা বলো, দ্বিরুক্তিমাত্র না করে তা তাঁরা মাথায় করে নেন; বিলিতি কেতাবে ইংরাজি ছাপার অক্ষরে যা লেখা আছে তা তাঁরা আর বুঝে হজম করতে শ্রম স্বীকার করেন না, শুক পাখির মতো মুখস্থ করে যান, কেননা বিলিতি ‘authority’র উপর তাঁদের এমন অটল ভক্তি যে বিচার না করেই ধরে নেন যে কথাগুলো সত্য হবেই। তাতে আমি তাঁদের দোষ দিতে পারি নে; কেননা ছেলেবেলা থেকে তাঁদের মন এমনি ছাঁচে গড়া যে, বড়ো লোকের মুখের সামনে একটা প্রশ্ন করতে তাঁদের বুক ধড়াস্ ধড়াস্ করে, বড়ো লোক যা বলেছেন তার উপরে আর কথা নেই।[২] তবে দুই বড়ো লোকের মধ্যে যখন মতের অনৈক্য হয়, তখন আমরা চুপ করে অপেক্ষা করতে থাকি- আর-একজন বড়ো লোক এসে তার কী মীমাংসা করে দেন। আমরা বড়ো লোকের নামের ঢেউ দেখলেই যুক্তির হাল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকি। কিন্তু এ রকম না হওয়াই আশ্চর্য। আমাদের নীতিশাস্ত্রে গুরুলোকের কাছে সম্পূর্ণরূপে আত্মবিসর্জন

১৪৮
  1.  
  2.