পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র





১৬২

    হইবে, কোনো মতে ছাড়া হইবে না, কোনো দেশের কোনো শাস্ত্রে এরূপ লেখে না। ভ. স.

    পুত্র বড়ো ও উপযুক্ত হইলে গুরুজনেরা কখনোই তাহাকে বলপূর্বক পরিচালন করেন না। গুরুজনেরা সত্য-সত্যই কিছু এরূপ বোধশূন্য পাষাণঅবতার নহেন যে, ছেলেপিলেদের উপর ক্ষমতা জারি করিবার জন্য তাহাদের উপর তাঁহারা প্রভুত্ব করেন; আর ছেলেপিলেরাও পেটে থেকে পড়েই কিছু এতদূর বুদ্ধিবিদ্যার বৃহস্পতি হয় না যে গুরুজনের কথা শুনিয়া চলিলে তাহাদের উপকার না হইয়া অপকার হয়—তাহার স্বাধীনবুদ্ধি খেলিতে পায় না, বুদ্ধিবৃত্তি দমনে থাকে, মন দমিয়া যায় ইত্যাদি। প্রকৃত কথাটা এই, ছোটো বালকদিগের পক্ষে শরীর-চালনা ও সামান্য স্মরণশক্তি-চালনাই যথেষ্ট, বালকদিগকে অতিশয় বুদ্ধি-চালনা শিক্ষা দিয়া তাহাদের অল্প বয়সেই প্রবীণ করিয়া তুলিলে তাহাদের মূলে আঘাত করা হয়। প্রকৃতি এইরূপ শিক্ষা দেন যে শরীরের স্ফূর্তি প্রথমে, মনের স্ফূর্তি তাহার পরে এবং বুদ্ধির স্ফূর্তি সবাকার শেষে হইলেই সর্বাঙ্গসুন্দর হয়; এমন-কি নিউটন রাফেএল প্রভৃতি অসাধারণ লোকেরাও তাঁহাদের গুরুদিগকে দেবতুল্য (অর্থাৎ আপনা হইতে অনেক বড়ো) জ্ঞান করিতেন। আগে যাহারা শ্রদ্ধাবান ভক্তিমান আজ্ঞাকারী সাকরেত না হয় পরে তাহারা কখনোই ওস্তাদ হইতে পারে না— ইহা বেদবাক্য। ভা.স.

    এ কথাটি হৃদয়শূন্য মস্তিষ্কের কথা। সম্পর্কের বড়োর সঙ্গে হৃদয়ের যেমন যোগ, জ্ঞানে ও গুণে বড়োর সঙ্গে সেরূপ হওয়া দুর্ঘট। ভা. স.

    পুত্র পিতার অসম্মতিতে বিবাহ করাতে পিতা তাহাকে দূর করিয়া দিয়াছে— ইংলন্‌ডে তো সর্বদাই এরূপ ঘটিতে দেখা যায়। ভা. স.

    রুগ্ন ছেলে ভিন্ন অন্য কোনো ছেলেকে আমি তো আজ পর্যন্ত শুষ্ক মলিন ধীর গম্ভীর দেখি নি। যে বয়সের যেটি স্বভাবসিদ্ধ ধর্ম তাহা এখানেও যেমন বিলাতেও তেমনি— বিলাতে নয় ব্যাট-বল খেলে, আমাদের দেশে নয় গুলিডাণ্ডা খেলে; বিলাতে হাইড-অ্যাণ্ড্-সীক খেলে, আমাদের দেশে নয় লুকাচুরি খেলে— প্রভেদের এই পর্যন্ত সীমা। ভা. স.