পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পত্র: পাদটীকা





১৬৩

    আমাদের দেশের টোলে এইরূপ প্রথাতেই শিক্ষা দেওয়া হইত, এক্ষণকার ইংরাজী বিদ্যালয়ের ‘routine business' প্রণালীতে বালকদিগের মন দমিয়া যায় ইহা আমি সম্পূর্ণ শিরোধার্য করি। ভা.স.

    আমাদের দেশের পাড়াগাঁ অঞ্চলেও এইরূপ দেখা যায়—লেখক শহরে Lord-দের ঘরে স্বতন্ত্ররূপ প্রথা দেখিবেন ইহা আমি সাহস করিয়া বলিতে পারি। ভা.স.

    লেখক এইমাত্র বলিলেন চাকর মনিবে বেশি তফাত ভাব নাই, ইহাতে বুঝায় যে তাহারা বাড়ির লোকেরই সামিল; আমাদের দেশের গৃহস্থ মানুষদের ঘরেও চাকর মনিবের মধ্যে ঐরূপ ভাব দৃষ্ট হয়—তাহার সাক্ষী চাকরানিকে ঝি বলিয়া সম্বোধন করিবার প্রথা। কিন্তু চাকরদের সঙ্গে পদে পদে সম্মানসূচক ব্যবহার করা— আষ্টে-পৃষ্টে কাষ্ঠসভ্যতার ভার বহন করা—আমাদের দেশের সহজসভ্য লোকদিগের পোষায় না। গর্দভও ভার বহন করিতে ভার বোধ করে, আমরা মনুষ্য হইয়া যদি ইচ্ছাপূর্বক আপন স্বন্ধে আপনি ভার চাপাই তবে তার চেয়ে আমরা বড়ো কিসে? ভা.স.

    এ-সকল কৃত্রিম সভ্যতার না আছে অর্থ, না আছে কিছু। আমাদের দেশে এরূপ মৌখিক ভদ্রতার যত কম আমদানি হয় ততই ভালো। মনে করো ছেলের জ্বর হয়েছে আর যেই তার বাপ একটা হাতপাখা তুলে নিয়ে তার গায়ে বাতাস দিতে লাগল অমনি ছেলে বলে উঠলেন ‘thank you বাবা’— এরূপ কাষ্ঠসভ্যতা কাষ্ঠহৃদয়ের উপরেই গুণ করিতে পারে, সহজ হৃদয়কে আগুন করিয়া তোলে। ভা.স.

    মনে করো একটি বড়ো পুত্র এবং একটি ছোটে পুত্র রাখিয়া পিতা মাতা লোকাত্তর গমন করিয়াছেন, এখন ছোটোটিকে তাহার পিতা যেমন যত্ন করিতেন তাহার জ্যেষ্ঠভ্রাতা তাহাকে সেইরূপ যত্ন না করিলে তাহার পক্ষে তাহা কর্তব্যবিরুদ্ধ হৃদয়বিরুদ্ধ ও নিন্দনীয় হয় কি না? পিতার অবর্তমানে যাহা এইরূপ অবশ্যম্ভাবী, পিতা বর্তমানে তাহা হইলে আরও ভালো হয় কি না? যে যাহাকে পুত্রের মতো যত্ন করে তাহাকে সে পিতার মতো ভক্তি করিবে কি না? ধাত্রীকে তাহার দুগ্ধপোষ্য শিশু স্বভাবতই মাতার মতো এবং স্থল-