পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র
১৬৬

    দুজন লোককে এক ঠাই মিলে আমোদ করতে দেখেছ কি আর অমনি মারো লাঠি! আমাদের দেশে কি বন্ধুবর্গেরা একত্র মিলে মিশে আমোদ করে না? বাপ-মার কাছে ছেলেরা বসিয়া কি কখনও সুখের আস্বাদ পায় না? না স্ত্রী পুরুষেরা পরস্পরের সহবাসে সুখভোগ করে না? না ছেলেপিলেরা আপনাদের মধ্যে বাল্যক্রীড়া করিয়া সুখী হয় না? অপরাধের মধ্যে পতিপত্নীরা পিতা মাতা শ্বশুর শাশুড়ির সমক্ষে পরস্পরের সহিত বাক্যালাপ করে না। না করিল তাহাতে কাহার কী ক্ষতি হইল? পতিপত্নীর পরস্পর হৃদয়বিনিময়ের কিছু ব্যাঘাত জন্মিল, না বন্ধুজনগণের আমোদের কিছু ব্যাঘাত জন্মিল, না পিতা-পুত্রের স্নেহভক্তির কোনো ব্যাঘাত জন্মিল! যাহা ঠিক, যাহা স্বাভাবিক, যাহা সভ্যোচিত, যাহা শোভন তাহাই হইল— যাহা বেঠিক বেচাল অসভ্যোচিত অশোভন তাহাই হইল না। অন্তঃপুরবাসিনীরা আপনাদের মধ্যে যেমন সখ্যরসের আলাপ করিতে পারে পুরুষদের সঙ্গে কখনোই তেমন পারে না। যেখানে পাঁচজন স্ত্রীলোকে মিলিয়া সখ্যরসের আলাপে নিমগ্ন হয় সেখানে পুরুষমানুষ গেলে তাহাদের আমোদে ব্যাঘাত পড়ে। এজন্য সথায় সখায় সম্মিলনের জন্য বহিরালয় এবং সখীতে সখীতে সম্মিলনের জন্য অন্তঃপুর সৃষ্ট হইয়াছে। ইহাতে পরিবারের স্ত্রীলোকদের এবং পুরুষদের সম্মিলনের কোনো বাধা নাই, দুই-এক স্থলে যা বাধা আছে তাহা দেশাচারের কোটায় ফেলিয়া দেওয়া উচিত (কোন্ দেশের দেশাচার একেবারেই কুসংস্কারবিহীন?)। ‘বাধা নাই’ কেবল নহে, পরিবারস্থ স্ত্রীলোকদের পুরুষদের মধ্যে সম্মিলনঘটনার সময়ও নির্ধারিত হইতে পারে, যেমন মধ্যাহ্নভোজনের সময় ইত্যাদি। স্ত্রীলোকেরা আপনাদের মধ্যে যেমন অসংকোচে সখ্যরসের আলাপ করিতে পারে, পুরুষদের সঙ্গে তাহারা তেমনটি পারে না বলিয়া সখ্যালাপহলে এ দেশে স্ত্রীলোকদের পুরুষদের একত্র সম্মিলনের প্রথা নাই। যদি কেবল অন্তঃপুরের স্ত্রীলোকদের সঙ্গে পুরুষেরা সন্ধ্যাযাপন করে তবে তাহারা বাহিরের বন্ধুদিগের সঙ্গে মিলিয়া প্রকৃতপক্ষে সখ্যরস উপভোগ করিবে কখন? যদি বলো যে ‘সখারা এবং সখীরা সকলে একত্রে মিলিয়া বন্ধুতালাপ করিতে হানি কী’ তাহার এই উত্তর যে তাহা হইলে ক্রমে এইরূপ দাঁড়াইবে যে, সখার