পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দশম পত্র

তা হয়ে গেলে বড়ো খুশি হওয়া যায়। সম্পাদক-মহাশয় তো বললেন ‘নির্বিষ’ স্ত্রীস্বাধীনতার সঙ্গে তাঁর কোনো মনান্তর নেই; এখন কাকে তিনি ‘নির্বিষ স্ত্রীস্বাধীনতা’ বলেন সেইটে মীমাংসা হয়ে গেলেই অধিক বক্তব্য থাকে না সম্পাদক-মহাশয়ের লেখা দেখে বোধ হয়, স্ত্রীপুরুষের মধ্যে আলাপ মাত্র হওয়া তাঁর মতে প্রার্থনীয় নহে,[১] কেননা ‘তাহাতে পাছে কু লোকে কু ভাবে, সু লোকে কু ভাবে ও স্বামীর মনে কু-আশঙ্কা স্থান পায়।’ তা যদি হয় তা হলে বাইরের কিছু দেখবার জন্যে মহিলাদের অন্তঃপুর থেকে বের হওয়াও প্রার্থনীয় নয়— কেননা পাছে তাতে করে ‘কু লোকে কু ভাবে, সু লোকে কু ভাবে, ও স্বামীর মনে কু-আশঙ্কা স্থান পাবার কোনো কারণ ঘটে।’[২] তা হলে দাঁড়াচ্ছে এই যে, আমাদের দেশে স্ত্রীলোকের যতটুকু স্বাধীনতা আছে তাই ‘নির্বির্ষ’ স্বাধীনতা। কেন, তাঁদের তো নিশ্বাস ফেলবার স্বাধীনতা আছে, সেটা একটা ‘নির্বিষ স্বাধীনতা’; হাই তোলবার ও পান সাজবার স্বাধীনতা আছে, সেটা আর-একটা ‘নির্বিষ স্বাধীনতা’; আহার করবার স্বাধীনতা আছে, যদি কেউ আড়ি ক’রে তাতে বিষ না মিশিয়ে দেয় তা হলে সেটাও একটা ‘নির্বিষ স্বাধীনতা’! তা হলে তো আমাদের অনেক পরিশ্রম বেঁচে গেল, আর কিছু করবার নেই। কিন্তু সেইটে গোড়ায় বললেই তো হত। এটা কিরকম হল জানো? করুণরসে নিতান্ত উচ্ছ্বসিত হয়ে একজন গরিবকে বলা হল, ‘আমার পকেটে যা আছে, বাপু, সব তুই নে।’ অথচ পকেটে একটি সিকি পয়সা মাত্র নেই। ভাগ্যি ছিল না, তাই তো এতটা করুণরসের কথা শোনা গেল। ‘পাছে কু লোক কু ভাবে ও সু লোক কু ভাবে এইজন্যেই কোনো স্ত্রীলোকের কোনো পরপুরুষের সহিত মেশা অবৈধ’— এর চেয়ে অযৌক্তিক কথা সচরাচর শোনা যায় না।

১৭৫
  1.  
  2.