পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একাদশ পত্র

বাইরের মাথা ও পার্শ্বস্থ সুন্দরী সহনর্তকীর মধুর হাসির প্রভাবে ভিতরের মাথা ঘুরে যায়) এ রকম স্থলে ললিত। বালিকারা কিরকম করে টিকে থাকেন আমি তাই ভাবি— এ পরিশ্রমটা তাঁদের নিজে করতে হয়, কোনো মহিলাভক্ত পুরুষ তাঁদের হয়ে নেচে দেয় না। এই তো গেল আমোদ-প্রমোদ— তা ছাড়া এই সময়ে পার্ল্যামেণ্টের অধিবেশন হয়, ব্যাণ্ডের একতান স্বর, নাচের পদশব্দ, ডিনারটেবিলের হাস্যালাপধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে একটা political কোলাহল লন‍্ডনের প্রাসাদারণ্য ধ্বনিত করতে থাকে। আমরা নির্জীব পররাজ্যবাসী জাতি, এখানকার political উত্তেজনা না দেখলে হয়তো বুঝতে পারি নে। রক্ষণশীল ও উন্নতিশীল দলভুক্তরা প্রতি রাত্রের পার্ল্যামেণ্টের রাজনৈতিক মল্লযুদ্ধের বিবরণ কী আগ্রহের সঙ্গে পড়তে থাকে (এমন-কি দোকানদার ও গাড়োয়ান পর্যন্ত), এক-একটা রাজনৈতিক প্রশ্ন নিয়ে কত সভার সৃষ্টি হয় ও কত তুমুল সংগ্রাম বাধে, conservative ও liberalরা দুই পক্ষেই দুই পক্ষের দুর্বল স্থান কী যত্নের সঙ্গে দিনরাত্রি অনুসন্ধান ও আক্রমণ করছে —সে ভাব আমাদের উত্তেজনাশূন্য ঝিমন্ত দেশে দুই প্রহরের রৌদ্রে তাকিয়া ঠেসান দিয়ে হাই তুলতে তুলতে কল্পনা করা একেবারে অসম্ভব। seasonএর সময় লন‍্ডন এই রকম নানা প্রকার উত্তেজনায় সরগরম থাকে। তার পরে আবার ভাঁটা পড়তে আরম্ভ হয়, লন‍্ডনের কৃষ্ণপক্ষ আসে। তখন লন‍্ডনের আমোদ কোলাহল বন্ধ হয়ে যায়, লোকজন চলে যায়, কেবল অল্পস্বল্প লোক, যাদের শক্তি নেই বা দরকার আছে, বা বাইরে যাবার ইচ্ছে নেই, তারাই লন‍্ডনে পড়ে থাকে। যখন লন‍্ডনে season নয় তখন লন‍্ডন থেকে চলে যাওয়া একটা fashion। আমি একটা বইয়ে (Sketches and Travels in London: Thackeray)

১৮১