পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

বাহার করে দিতে পারে। এখেনে মদের দোকানগুলোই সব চেয়ে জমকালো দেখতে, সন্ধের সময় সেগুলো আলোয়-আলোয়=আলাকীর্ণ হয়ে যায়; বাড়িগুলো প্রায় প্রকাণ্ড হয়; ভিতরটা খুব বড়ো ও সাজানো ও খদ্দেরের ঝাঁক দোকানের বাইরে ও ভিতরে সর্বদাই, বিশেষতঃ সন্ধেবেলায়, লেগে থাকে। দরজীর দোকানও মন্দ নয়। নানা ফেশানের কোট প্যাণ্টলুন কাঁচের জানলার ভিতর থেকে দেখা যাচ্ছে, বড়ো বড়ো কাঠের মূর্তিকে কাপড় পরিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মেয়েদের কাপড়-চোপড় এক দিকে সাজানো; সে-সকল নানা প্রকার সাজসজ্জা টুকরো-টাকরা আমার মতো একজন বিদেশী bachelorএর কাছে ঘোরতর রহস্য, তার মধ্যে দন্তস্ফুট করা আমার সাধ্য নয়— এইখানে যে কত লুব্ধ নেত্র দিন রাত্রি তাকিয়ে আছে তার সংখ্যা নেই, সাজসজ্জার দিকে সকল দেশের মেয়েদেরই সমান টান। এখানকার বিলাসিনীরা, যাদের নতুন ফেশানের দামী কাপড় কেনবার টাকা নেই, তারা দোকানে এসে দামী কাপড়গুলে। ভালো করে দেখে যায়; তার পরে বাড়িতে গিয়ে সস্তায় নিজের হাতে তৈরি করে। এখানকার দোকান-বাজার-গুলো এই রকম লন‍্ডনের ছাঁচে তৈরি। আমাদের বাড়ির কাছে একটা খোলা পাহাড়ে জায়গা আছে, সেটা common অর্থাৎ সরকারী জায়গা; চার দিক খোলা, বড়ো গাছ খুব অল্প, ছোটো ছোটো গুল্মের ঝোপ ও ঘাসে পূর্ণ, চার দিক সবুজ, বিচিত্র গাছপালা নেই বলে কেমন ধূ ধূ করছে, কেমন বিধবার মতো চেহারা, উঁচু নিচু জমি, কাঁটাগাছের ঝোপঝাপ— জায়গাটা আমার বেশ লাগে। মাঝে মাঝে এই রকম কাঁটাখোঁচা এবড়ো-খেবড়োর মধ্যে এক-এক জায়গায় এক রকম ছোটো ছোটো নীল ফুল ঘেঁষাঘেঁষি ফুটে সবুজের মধ্যে স্তূপাকার নীল রঙ ছড়িয়ে রেখেছে; কোথাও বা

১৮৬