পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

নেই, চার-ট্রিক অত্যন্ত পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। ঘুমন্ত শহরটা খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। তার নির্জন রাস্তাগুলি, গির্জের উন্নত চূড়া, রৌদ্ররঞ্জিত বাড়িগুলি নীল আকাশের পটে যেন একটি অতি স্পষ্ট ছবির মতো আঁকা। খুব ভালো লাগছে বটে, কিন্তু ভালো লাগার প্রধান কারণ হচ্ছে— একটা শহরের ঘুমন্ত ভাব কল্পনা করা। একটা ঘুমন্ত গ্রামের চেয়ে একটা ঘুমন্ত শহরের গাম্ভীর্য আছে; পরিশ্রম নড়াচড়া ও যুঝাযুঝি ব’লে একটা প্রকাণ্ড দত্য অসহায় শিশুটির মতো ঘুমিয়ে আছে, তার কপাল থেকে ভাবনার ভ্রূকুঞ্চন মিলিয়ে গেছে; মুখের একটা দৃঢ়ভাব চলে গিয়েছে, অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো শিথিল হয়ে এলিয়ে পড়েছে। দিনের বেলায় আফিসের মূর্তিতে যাকে খারাপ দেখাচ্ছিল এই ঘুমন্ত অবস্থায় তার মুখেই একটু সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে দেখে আমার ভালো লাগে, নইলে আসলে এই শহরটা কিছুই ভালো দেখতে নয়— এখানকার বাড়িগুলো আমি দুচক্ষে দেখতে পারি নে। জানলা-কাটা-কাটা চারটে দেয়াল, একটা ঢালু ছাত ও তার ওপরে ধোঁওয়া বেরোবার কতকগুলো কুশ্রী নল হচ্ছে এখানকার বাড়ির বাহ্য আকার— এ আর কী ভালো দেখাবে বলো। ক্রমে ক্রমে যতই বেলা হতে লাগল শত শত chimney থেকে অমনি ধোঁওয়া বেরোতে লাগল, ধোঁওয়াতে ক্রমে শহরটা অস্পষ্ট হয়ে এল। রাস্তায় ক্রমে মানুষ দেখা দিলে, গাড়ি ঘোড়া বেরোতে আরম্ভ হল, হাতগাড়ি কিম্বা ঘোড়ার গাড়িতে করে দোকানিরা মাংস রুটি তরকারি বাড়িতে বাড়িতে বিতরণ করে বেড়াতে আরম্ভ করলে (এখানে দোকানিরা বাড়িতে বাড়িতে জিনিসপত্র দিয়ে আসে), ক্রমে commonএ লোক জমতে আরম্ভ হল— আমি বাড়ি ফিরে এলেম।

 আমার এখানে একটি সাধের বেড়াবার জায়গা আছে, আমি

১৮৮