পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বাদশ পত্র

 এখানকার সমুদ্রের ধার আমার বড়ো ভালো লাগে। যখন জোয়ার আসে তখন সমুদ্রতীরের খুব প্রকাণ্ড পাথরগুলো জ্বলে ডুবে যায়, তাদের মাথা বেরিয়ে থাকে। খুব ছোটো ছোটো দ্বীপের মতো দেখায়। জলের ধারেই ছোটো বড়ো কত পাহাড় উঠেছে। ঢেউ লেগে লেগে পাহাড়ের নীচে সব গুহা তৈরি হয়ে গেছে, যখন ভাঁটা পড়ে যায় তখন আমরা এক-এক দিন এই গুহার মধ্যে গিয়ে বসে থাকি। বেশ নির্জন। সুমুখে দিগন্তবিস্তৃত সমুদ্র। গুহার মধ্যে জায়গায় জায়গায় অতি পরিষ্কার একটু-একটু জল জমে রয়েছে, ইতস্ততঃ সমুদ্রউদ্ভিদ (seaweeds) পড়ে রয়েছে, সমুদ্রের এক রকম স্বাস্থ্যজনক গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, চার দিকে পাথর ছড়ানো আছে। আমরা সবাই মিলে এক-এক দিন সেই পাথরগুলো ঠেলাঠেলি করে নড়াবার চেষ্টা করি, নানা শামুক ঝিনুক কুঁড়িয়ে নিয়ে আসি। এক-একটা পাহাড় সমুদ্রের জলের ওপর খুব ঝুঁকে পড়েছে, আমরা প্রাণপণ করে এক-এক দিন সেই অতি দুর্গম পাহাড়গুলোর ওপর উঠে বসে নীচে সমুদ্রের ঢেউয়ের উত্থানপতন দেখি। সমুদ্রের একটা হু হু শব্দ উঠছে, জলে এক-একটা ছোটো ছোটো নৌকা পাল তুলে চলে যাচ্ছে, চার দিকে রোদ‍্দুর হাসছে, মাথার ওপর এক-একটা ছাতা খোলা রয়েছে, পাথরের ওপর মাথা দিয়ে আমরা শুয়ে শুয়ে গল্প করছি। আলস্যে কাল কাটাবার এমন জায়গা আর পাবে? তুমি যে Thomsonএর Castle of Indolence পড়েছ— এখানটা তার একটা জীবন্ত ছবি। এক-এক দিন পাহাড়ে যাই আর পাথর-দিয়ে-ঘেরা ঝোপঝাপে-ঢাকা একটি প্রচ্ছন্ন জায়গা দেখলে সেইখানটিতে গিয়ে একটি বই নিয়ে পড়তে বসি। কিন্তু অতি একমনে বই পড়বার জায়গা টর্কী নয়। মনের এমন শিথিল অলস অবস্থায় অত মনো-

১৯৩