বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বাদশ পত্র

হচ্ছে কি? আমি, ভাই, কবি নই—একটা ঘোরতর কাজের লোক। তবে যে, এ জায়গাটা খুব ভালো লাগছে বলছি তার কারণ হচ্ছে। বরাবর শুনে আসছি ভালো জায়গা দেখলে লোকের ভালো লাগা উচিত। না ভালো লাগলে বড়ো লজ্জার বিষয়। তুমি হচ্ছ কবি মানুষ, ছড়াটড়া লিখে থাক, তুমি এখানে এলে বাস্তবিক তোমার লাগত ভালো।

 একটা গল্প বলি শোনো। আমাদের এখেনে দিন কতক Miss Hও Miss N ছিলেন। Miss H একজন চিত্রকরী। তাঁর বড়ো সুন্দর ছবি আঁকা আসে। তিনি প্রায় প্রত্যহ breakfast খেয়েই সমস্ত সরঞ্জাম নিয়ে ছবি আঁকতে বেরোতেন। Miss N ক্রমিক কবিতা ও নভেল পড়েন ও তিনিও নাকি শুনেছি কাগজে খুব ভালো ভালো sonnet মাঝে মাঝে লিখে পাঠান। মাঝে মাঝে আমরা তাঁদের সঙ্গে বেড়াতে যেতেম। কোনোখানে একটা এবড়ো খেবড়ো রাস্তা, কোথাও বা একটা ভাঙাচুরো বেড়া, কোথাও বা খানিকটা বনজঙ্গল ঝোপঝাপ, কখনো বা এক খণ্ড মেঘের বিশেষ একটা রঙ দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতেন ও শতমুখে ব্যাখ্যা করতেন। আমার তো ভ্যাবাচ্যাক। লেগে যেত, আমি তাদের বিশেষ সৌন্দর্য বড়ো একটা বুঝতে পারতেম না; ঝট্ করে একটা মত ব্যক্ত করতে বড়ো ভয় করত। দ্বিরুক্তিমাত্র না করে তাঁদের মতে সায় দিয়ে যেতেম। রোজ রোজই আমি অতি ভালোমানুষটির মতো তাঁদের প্রতি কথায় বিনীত ভাবে সায় দিয়ে যেতেম। শেষকালে আমার বড়ো লজ্জা বোধ হতে লাগল। একদিন বেড়াতে বেরোবার সময় প্রতিজ্ঞা করলেম, ‘আজ আমি নিজে হতে প্রকৃতির একটা কিছু সৌন্দর্য বের করে আগে থাকতে তাঁদের দেখাব, তাঁদের মুখ থেকে বাহবা নিতেই হবে।’ এই পণ করে

১৯৫