পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বাদশ পত্র

দাঁড় করিয়ে ছবি নেওয়া হল। আর, রাস্তা দিয়ে কত মহা মহা সুন্দরী চলে যায়, যাদের একদিন দেখলে তিরিশ দিন মলয় সমীরণ ও চাঁদের কিরণে দগ্ধ করতে থাকে, তাদের সম্বন্ধে তাঁরা একটি কথাও কন না। কেন বলো দেখি। যা হোক, অপ্রস্তুত হয়ে বাড়ি গিয়েই একটা বাংলা কবিতা লিখতে বসলেম। Miss N আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি বাড়িতে চিঠি লিখছি? আমি বিনয়সহকারে হাসতে হাসতে বললেম যে, ‘আমি মাঝে মাঝে কবিতা লিখতে চেষ্টা করে থাকি, তাই দুই-এক ছত্র কবিতা লিখছি।’ শুনে অবধি Miss Nএর আমার প্রতি ভারী ভক্তি হয়েছে। তিনি মনে করলেন, লোকটা খুব ভাবুক হবে। তিনি তাঁর লেখা দুই-একটা sonnet আমাকে শোনাতে আরম্ভ করলেন। কবিতা পড়তে পড়তে যেখানটা ভালো লাগত আমাকে চেঁচিয়ে শোনাতেন। আমার উচ্ছ্বাস দেখে কে! আমার পূর্বকৃত কোনো ত্রুটি তাঁর আর মনে রইল না। ক্রমে ক্রমে তাঁর সঙ্গে আমার আলাপ ভারী পরিপক্ব হয়ে উঠতে লাগল— এত দূর পর্যন্ত যে, একটা ফুস‍্ফাস্ উঠল। ম—সন্দেহ করলেন যে, Miss Nএর নেত্র রূপ ও বাক্যবাণ-বর্ষণের মধ্যে পড়ে আমার বুকটা দু-তিন টুকরো হয়ে গেছে। আমি তাঁকে বোঝাতে গেলেম, ‘মাথা নেই তার মাথাব্যথা। আমি একটা হৃদয়হীন শীতলশোণিত জীব। আমার হৃদয় দগ্ধও হয় না, ভস্মও হয় না, হারায়ও না, ভাঙেও না, চুরেও না। অমন একটা বিষম নট্‌খোটে পদার্থের আমি কোনো সম্পর্কই রাখি নে।’ তিনি তো বিশ্বাসই করলেন না। তিনি বললেন, ‘courtship চালাও।’ আমার মতো চুপচাপ লাজুক মানুষ কি courtship চালাবার উপযুক্ত নাবিক? আমি কি মশায় তার দিকে হাঁ করে চেয়ে ফোঁস ফোঁস করে নিশ্বেস ফেলতে পারি! ডিনার-টেবিলে আমার দিকে

১৯৭