পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

একটা লবণ-দানি সরিয়ে দিলে এমনি অতিমাত্র কৃতজ্ঞতায় উচ্ছ্বসিত হয়ে চলঢল নেত্রে অত্যন্ত কোমল ভারপূর্ণ হাস্যরসে মুখখানা টস্‌টোসে করে হৃদয়ের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা কি আমার কর্ম! বায়রন থেকে বেছে বেছে এমন কবিতা পড়ে শোনানো যাতে আমার মনের ভাব ব্যক্ত হয়, পড়তে পড়তে বিশেষ একটা লাইনে থেমে অতিশয় করুণরসের দীর্ঘনিশ্বাস ফেলা, সে-সব কি আমার পোষায়! আমি কি হাঁটু গেড়ে বলতে পারি: সুন্দরি, ত্বমসি মম ভূষণং স্বমসি মম জীবনং ত্বমসি মম ভবজলধিরত্নং! তোমরা কবি মানুষ তোমরা হলে পারতে। কিন্তু এ কথা নিয়ে আর বেশি ঠাট্টা উচিত নয়— বিষয়টি গুরুতর, একটা মনুষ্যমনের সুখশান্তি নিয়ে কথা হচ্ছে। আমার আলাপী অনেক লোকের মুখেই এই রকম একটা গুজব শুনতে পাচ্ছি যে, আমি ভালোবাসায় পড়েছি ও সেই জন্যে মনে মনে আমার অত্যন্ত কষ্ট হচ্ছে। সংবাদটা অত্যন্ত ভাবনাজনক এবং শুনে অবধি আমি ভারী চিন্তিত আছি। কী করব বলো দেখি? বিবাহের প্রস্তাব করব কি? অবিশ্যি, লোকের মুখে এক কথা শুনেই আমি তাড়াতাড়ি করে বিয়ে করতে যাচ্ছি নে। আমি প্রথমতঃ তদারক করব যে আমি ভালোবাসায় পড়েছি কি না, তার পরে যদি প্রমাণ হয় তা হলে তোমাদের এবং অন্যান্য আত্মীয় বন্ধুবান্ধবদের পরামর্শ নিয়ে যা হয় স্থির করা যাবে। কী বল? তার পরে গল্পের শেষ দিকটা শোনো। সেই বাংলা কবিতাটা লিখছিলেম। চতুর্থ ছত্রে লাইনের শেষে ডেজি (daisy) কথাটা পড়ে গিয়েছিল, কিন্তু তার আর কোনো মিল না পেয়ে সেইখেনেই কবিভাটা বন্ধ থাকে। এ দিকে Miss N রোজই আমাকে পীড়াপীড়ি করেন; বলেন, ‘তোমার কবিতাটা অনুবাদ করে শোনাও।’ আমি তো আজকাল করে রোজই স্থগিত রাখি। পরশু দিন তাঁরা এখান

১৯৮