পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রয়োদশ পত্র

আগে যখন আমার উঠতে দেরি হত সে তার বরাদ্দ বিস্কুট নিয়ে আমার শোবার ঘরের কাছে বসে ঘেউ ঘেউ করত। কিন্তু গোল করলে আমি বিরক্ত হুতুম দেখে সে এখন আর ঘেউ ঘেউ করে না। আস্তে আস্তে পা দিয়ে দরজা ঠেলে; যতক্ষণ না আমি দরজা খুলে দিই, চুপ করে বাইরে বসে থাকে। দরজা খুলে ঘর থেকে বেরলেই সে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে নেজ নেড়ে সুপ্রভাত সম্ভাষণ করে; তার পরে একবার বিস্কুটের দিকে চায় একবার আমার মুখের দিকে চায়। মনোগত ভাবটি এই যে, ‘প্রাতঃকৃত্য সারা হয়েছে? তা বেশ হয়েছে। এখন আমার বিস্কুটটি একবার গড়িয়ে দেও; আমার বড়ো খেলা করবার ইচ্ছে গিয়েছে।’ একএক সময় সন্ধে বেলায় পেছন দিকের দুটো পা গুটিয়ে সুমুখের দুটো পায়ের ওপর ভর দিয়ে মহাচিন্তিতভাবে বৃদ্ধ আগুনের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকে। আধ ঘণ্টা যায়, এক ঘণ্টা যায়, Tobyর হুঁস নেই। তখন তাকে আদর করতে যাও, মাথায় হাত বুলোও, মহা-অসন্তুষ্ট-ভাবে গোঁ গোঁ করে, মাথা নাড়ে। ‘বিরক্ত কর কেন? ভাবতে ভাবতে আমার মাথা ঘুরে যাচ্ছে এখন উনি আমার মাথায় হাত বুলোতে এলেন!’ এ ব্যক্তি পূর্বজন্মে কী ছিল বলো দিকি? অ্যারিস্টট্‌ল্ ছিল না কি? যা হোক, সাড়ে নটার মধ্যে আমাদের ব্রেক‍্ফাস্ট্ শেষ হয়। তার পরে Mrs. K হাতে দস্তানা পরে দাসীদের নিয়ে চৌতলা থেকে একতলা পর্যন্ত, জিনিসপত্র গোছানো, ঘর দ্বার পরিষ্কার করানো ও সমস্ত গৃহকার্য তদারক করে উঠানাবা করেন। একবার রান্নাঘরে যান— সেখেনে শাকওয়ালা রুটিওয়ালা মাংসওয়ালার বিল দেখেন, যাকে যার চুকিয়ে দেবার দেন। মাঝে মাঝে ওপরে এসে Mr. Kর সঙ্গে গৃহকার্যের পরামর্শ হয়। রান্নাঘরের উপকরণ পরিষ্কার আছে কিনা ও যথাস্থানে আছে

২০৫