পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

কিন্তু আমি যে কেন অবতার-শ্রেণীর মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেম তার কারণ সহজে নির্দেশ করা যায় না। খাবার সময়ে তাঁর এক গল্প ছিল যে, একজন নেমন্তন্ন খেতে গিয়েছিল, তার অপরিমিত আহার দেখে তার পাশের এক জন ভদ্রলোক বললেন―‘মহাশয়, পরের খরচে আহার কচ্ছেন অতএব বড়ো ভাবনার বিষয় নেই বটে, কিন্তু মনে রাখবেন পেটটি আপনার।’ কিন্তু ব―মহাশয় নিজে সকল সময় সেইটি মনে রাখেন না।

 আমাদের জাহাজের T―মহাশয় কিছু নূতন রকমের লোক। তিনি ঘোরতর ফিলজফর মানুষ। তাঁকে কখনো চলিত ভাষায় কথা কইতে শুনি নি। তিনি কথা কইতেন না, বক্তৃতা দিতেন। এক দিন আমরা দুই চার জনে মিলে জাহাজের ছাতে দুই দণ্ড আমোদ-প্রমোদ করছিলেম, এমন সময়ে দুর্ভাগ্যক্রমে ব―মহাশয় তাঁকে বললেন ‘কেমন সুন্দর তারা উঠেছে’। এই আমাদের ফিলজফর মহাশয় তারার সঙ্গে মনুষ্যজীবনের সঙ্গে একটা উৎকট সম্বন্ধ বাঁধিয়ে দিয়ে বক্তৃতা শুরু কল্লেন―আমরা বেচারিরা ‘মুর্খেতে চাহিয়া থাকে ফ্যাল ফ্যাল করিয়া’ রইলেম। গল্পসল্প ঘুচে গেল, গানবাজনা থেমে গেল, জন দুয়েক ঢুলতে আরম্ভ করলেন, জন দুয়েক হাই তুলতে আরম্ভ করলেন―সমস্ত মাটি হয়ে গেল।

 আমাদের জাহাজে একটি আস্ত জনবূল ছিলেন। তাঁর তালবৃক্ষের মতো শরীর, ঝাঁটার মতো গোঁফ, সজারুর কাঁটার মতো চুল, হাঁড়ির মতো মুখ, মাছের চোখের মতো ভাববিহীন ম্যাড়্‌মেড়ে চোক, তাঁকে দেখলেই আমার গা কেমন করত, আমি পাঁচ হাত তফাতে সরে যেতেম। এক-এক জন কোনো অপরাধ না করলেও তার মুখশ্রী যেন সর্বদা অপরাধ করতে থাকে। প্রত্যহ সকালে উঠেই শুনতে পেতেম তিনি ইংরিজি ফ্রেঞ্চ্‌ হিন্দুস্থানি প্রভৃতি যত ভাষা