পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

 সকাল বেলায় প্যারিসে গিয়ে পৌঁছলেম। কী জমকালো শহর। সেই অভ্রভেদী প্রাসাদের অরণ্যের মধ্যে গিয়ে পড়লে অভিভূত হয়ে যেতে হয়। মনে হয় প্যারিসে বুঝি গরিব লোক নেই। আমার মনে হল, এই সাড়ে তিন হাত মানুষের জন্যে এমন প্রকাণ্ড জমকালো বাড়িগুলোর কী আবশ্যক! একটা হোটেলে গেলেম, তার সমস্ত এমন প্রকাণ্ড কাণ্ড যে, ঢিলে কাপড় পরে যেমন সোয়াস্তি হয় না সে হোটেলে থাকতে গেলেও আমার বোধ হয় তেমনি অসোয়াস্তি হয়। একটা ঘরের মধ্যে কোথায় মিশিয়ে যাই তার ঠিক নেই। স্মরণস্তম্ভ, উৎস, বাগান, প্রাসাদ, পাথরে বাঁধানো রাস্তা, গাড়ি, ঘোড়া, জনকোলাহল প্রভৃতি দেখে অবাক্‌ হয়ে যেতে হয়। প্যারিসে পৌঁছিয়েই আমরা একটা ‘টার্কিশ বাথে’ গেলেম। প্রথমতঃ আমরা একটা খুব গরম ঘরে গিয়ে বসলেম। সে ঘরে অনেক ক্ষণ থাকতে থাকতে কারও কারও ঘাম বেরোতে লাগল; কিন্তু আমার তত বেরোল না, আমাকে তার চেয়ে আর-একটা গরম ঘরে নিয়ে গেল। সে ঘরটা আগুনের মতো। চোক মেলে থাকলে চোক জ্বালা করতে থাকে, মিনিট কতক থেকে সেখানে আর থাকতে পারলেম না, সেখান থেকে বেরিয়ে আমার খুব ঘাম হতে লাগল। তার পরে এক জায়গায় নিয়ে গিয়ে আমাকে শুইয়ে দিলে, তার পরে ভীমকায় এক ব্যক্তি এসে আমার সর্বাঙ্গ ডলতে লাগল। তার সর্বাঙ্গ খোলা, এমন মাংসপেশল চমৎকার শরীর আমি আর কখনো দেখি নি। ব্যূঢ়োরস্কো বৃষস্কন্ধঃ শালপ্রাংশুর্মহাভুজঃ। আমি মনে মনে ভাবলেম, ক্ষীণকায় এই মশকটিকে দলন করার জন্যে এমন প্রকাণ্ড কামানের কোনো আবশ্যক ছিল না। সে আমাকে দেখে বললে―আমার শরীর বেশ লম্বা আছে, এখন পাশের দিকে বাড়লে আমি

১৮