পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

শেখার মতো আমি প্যারিস এক্‌জিবিশনের সমস্ত দেখেছি কিন্তু কিছুই ভালো করে দেখি নি। এক দিনের বেশি আমাদের প্যারিসে থাকা হল না―সে বৃহৎকাণ্ড এক দিনে দেখা কারও সাধ্য নয়। সমস্ত দিন আমরা দেখলেম, কিন্তু সে রকম দেখায় দেখবার একটা তৃষ্ণা জন্মালো কিন্তু দেখা হল না। সে একটা নগরবিশেষ। এক মাস থাকলে তবে তা বর্ণনা করবার দুরাশা করতেম। প্যারিস এক্‌জিবিশনের একটা স্তূপাকার ভাব মনে আছে, কিন্তু শৃখলাবদ্ধ ভাব কিছুই মনে নেই। সাধারণতঃ মনে আছে যে, চিত্রশালায় গিয়ে অসংখ্য অসংখ্য চমৎকার ছবি দেখেছি―স্থাপত্যশালায় গিয়ে অসংখ্য অসংখ্য প্রস্তরমূর্তি দেখেছি―নানা দেশবিদেশের নানা জিনিস দেখেছি―কিন্তু বিশেষ কিছু মনে নেই। তার পর, প্যারিস থেকে লন্‌ডনে এলেম। এমন বিষণ্ণ অন্ধকার পুরী আর কখনো দেখি নি। ধোঁওয়া, মেঘ, বৃষ্টি, কোয়াশা, কাদা আর লোকজনের ব্যস্ত-সমস্ত ভাব―এই হচ্ছে লন্‌ডনের যথাসর্বস্ব। আমি দুই-এক ঘণ্টা মাত্র লন্‌ডনে ছিলেম, যখন লন্‌ডন পরিত্যাগ করলেম তখন নিশ্বাস পরিত্যাগ করে বাঁচলেম। আমার বন্ধুরা আমাকে বললেন, লন্‌ডনের সঙ্গে প্রথম দৃষ্টিতেই ভালোবাসা হয় না; কিছুদিন থেকে, তাকে ভালো করে চিনলে তবে লন্‌ডনের মাধুর্য বোঝা যায়।

দ্বিতীয় পত্র

আমি ইংলন্‌ড্‌ দ্বীপটাকে এত ছোটো ও ইংলন্‌ডের অধিবাসীদের এমন বিদ্যালোচনাশীল মনে করেছিলেম যে, ইংলন্‌ডে আসবার আগে আমি আশা করেছিলেম যে এই ক্ষুদ্র দ্বীপের এক প্রান্ত থেকে

২০