পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বিতীয় পত্র

যাও তবে হয়তো ভ্রমে পড়বে। এখানকার বিবিরা দর্জিশ্রেণীর জীবিকা, ফ্যাশান-রাজ্যের বিধাতা ও যুবকদলের খেলানাস্বরূপ। খেলানা আমি এই অর্থে বলছি যে, যখনি কারও সন্ধ্যের সময় একটু সময় কাটাবার আবশ্যক হল, দুই-একটি মিসের সঙ্গে হয়তো তিনি sentimental অভিনয় করে এলেন। পুরুষদের মন ভোলানোই মেয়েদের জীবনের একমাত্র ব্রত। যদি একজন পুরুষের মন ভোলাতে পারেন তবে মনে করলেন জীবনের একটা মহান্ লক্ষ্য সিদ্ধ হল, পূর্ব জন্মের অনেক তপস্যা সার্থক হল। মন-ভোলানো যজ্ঞে তাঁদের নিজের সুখ স্বাস্থ্য বলিদান দিতে তাঁরা কুণ্ঠিত নন, কোমর এঁটে এঁটে তারা বোলতার মতো কোমর করে তুলবেন―তার জন্যে তাঁরা সকল প্রকার যন্ত্রণা সহ্য করতে ও সকল প্রকার রোগ সঞ্চয় করতেও রাজি আছেন। বাহারে কাপড় প’রে মাথায় গোটা কতক পালক গুঁজে দিন রাত্রি তাঁরা পুতুলটি সেজে আছেন, অভিনয় করে করে এমন তাঁদের অভ্যেস হয়ে গেছে যে অস্বাভাবিকও তাঁদের স্বাভাবিক হয়ে গেছে। যে মেয়ের সাজসজ্জা সৌন্দর্য বাইরে থেকে খুব স্বাভাবিক ও অযত্নসাধ্য বলে মনে হয়, যাদের কথাবার্তার মাধুরীতে আয়াসের লক্ষণ দেখা যায় না, মনে হয় affectation আদবে জানে না, তারাই হয়তো পাকা affectation জানে। এমন হতে পারে যে, একজন মেয়ে হয়তো পুরুষের প্রেমে পড়েছে, সেই পুরুষের হৃদয় অধিকার করাই তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য, কিন্তু তাই ব’লেই যে তিনি নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকেন তা প্রায় দেখা যায় না। যেমন অনেক শিকারী খাবার জন্যে পাখি মারতে যায় না, তাদের বন্দুকের লক্ষ সিদ্ধ হল বলে আরাম পায়―হৃদয় অধিকার করতে এঁরাও সেই আরাম পান। আমি মন-ভোলাবার জন্য এ রকম হাব ভাব, হাত পা নাড়া, গলা সেধে সরু করা, মিষ্টভাবের

২৩