পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় পত্র

মেয়ে সেজে গিয়েছিলেন―একটা শাড়ি ও একটা কাঁচুলি তাঁর প্রধান সজ্জা, তার উপরে একটা চাদর পরেছিলেন, তাতে ইংরিজি কাপড়ের চেয়ে তাঁকে ঢের ভালো দেখাচ্ছিল। একজন বিলিতি দাসী সেজে গিয়েছিল, যে রকম তার চেহারা তাতে দাসীর পোশাক ছাড়া আর কিছুতে তাকে মানাতো না। এই রকম নানা লোক নানা রকম পোশাক প’রে গিয়েছিল। আমি বাঙালার জমিদার সেজেছিলেম; জরি-দেওয়া মখমলের কাপড়, জরি-দেওয়া মখমলের পাগড়ি প্রভৃতি পরেছিলেম। জনকতক ব্যক্তি মিলে পীড়াপীড়ি করে আমাকে একটা দাড়ি গোঁপ পরালেন। দুই-এক জন মহিলা আমাকে দেখে বললেন যে, সে দাড়ি গোঁপে আমাকে ভারী ভালো দেখাচ্ছে। তাতে আমার স্বভাবতই ভারী গর্বের আবির্ভাব হল, আমি সেই দাড়ি গোঁপ পরেই ‘বলে’ গিয়ে উপস্থিত হলেম। কিন্তু দর্পহারী মধুসূদন আছেন, আমি যে নাকালটা হলেম তা আর বক্তব্যও নয়, শ্রোতব্যও নয়। তা শুনলে পাষাণেরও চোখ ফেটে মুক্তার মতো ডাগর ডাগর অশ্রুবিন্দু দরদর ধারে বিগলিত হয়ে ধরণীতল অভিষিক্ত করবে। যে-সকল সুন্দরী বন্ধুদের সঙ্গে আমার আলাপ ছিল, আমার দাড়ি গোঁপ দেখে তারা আর কেউ আমাকে চিনতে পারেন না। অমুকের সঙ্গে সকলেই সেক্‌হ্যান্‌ড্‌ করলে, অমুক বাবুর সঙ্গে সকলেই সেক্‌হ্যান্‌ড্‌ করলে―কিন্তু এ গরিবকে আর কেউ পোছে না। আমি যার কাছে যাই সেই সরে পড়ে। আমি তো রাগে দুঃখে অভিমানে বিরক্তিতে আত্মগ্লানিতে অভিভূত হয়ে সেই মুহূর্তেই দাড়ি গোঁপ উৎপাটন করে একেবারে পকেটে গুঁজলেম, তখন সমস্ত ভালোয় ভালোয় মীমাংসা হয়ে গেল। আমাদের মধ্যে অমুক অযোধ্যার তালুকদার সেজে গিয়েছিলেন। শাদা রেশমের ইজের জরিতে খচিত, শাদা রেশমের

২৯