পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

যন্ত্রের মতে নাচছে। কোনো লেডি partner (সহনর্তক) পান নি, তিনি দেয়ালের কোণে দাঁড়িয়ে সদ্বেষনয়নে হাসিমুখ ঘূর্ণমান নর্তকযুগলকে নিরীক্ষণ করছেন, আর বিফলে প্রফুল্লতার ভাণ করতে চেষ্টা করছেন। তাঁর নাম wallflower, অর্থাৎ ‘দেয়ালকুসুম’; তিনি স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে নাট্যশালার দেয়ালের শোভা বর্ধন করেন। একটা নাচ শেষ হল, বাজনা থেমে গেল, নর্তক মহাশয় তাঁর শ্রান্তসহচরীকে আহারের ঘরে নিয়ে গেলেন; সেখানে টেবিলের উপর ফল মূল মিষ্টান্ন মদিরার আয়োজন। হয়তো আহার পান করলেন, নাহয় দুজনে নিভৃত কুঞ্জে বসে রহস্যালাপ করতে লাগলেন। আমি নতুন লোকের সঙ্গে বড়ো মিলে মিশে নিতে পারি নে, যে নাচে আমি একেবারে সুপণ্ডিত সে নাচও নতুন লোকের সঙ্গে নাচতে পারি নে, প্রতিপদে ভুল হয়, লোকের গাউন মাড়িয়ে দিই, প্রতি লোককে ধাক্কা দিই, বেতালে পা ফেলি, কখনো বা অসাবধানে আমার সহনর্তকীর পাও মাড়িয়ে দিই―আর এই রকম নানা-প্রকার গলদ করে অবশেষে নাচের মাঝখানে থেমে পড়ি ও আমার সহচরীর কাছ থেকে মার্জনা ভিক্ষা করে সে দিক থেকে আস্তে আস্তে পিট্টান দিই। সত্যি কথা বলতে কী, আমার নাচের নেমন্তন্নগুলো বড়ো ভালো লাগে না। অপরিচিত মেয়ের সঙ্গে ও রকম পাগলের মতো ঘুরে ঘুরে বেড়াতে আমার আদবে ভালো লাগে না। যাদের সঙ্গে আমার বিশেষ আলাপ আছে, তাদের সঙ্গে নাচতে আমার মন্দ লাগে না। Miss অমুকের সঙ্গে আমার বেশ আলাপ ছিল, আর তাকে বেশ দেখতে, তার সঙ্গে আমি gallop নেচেছিলেম, তাই জন্যে তাতে আমার কিছু ভুল হয় নি। কিন্তু Miss অমুকের সঙ্গে আমি lancers নেচেছিলেম, তার সঙ্গে আমার আলাপ ছিল না, আর তাঁকে অতি বিশ্রী দেখতে―তাঁর চোখ দুটো বের-করা, তাঁর গাল

৩৪