পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

শ্রোতাদের মনও অমনি জুড়িয়ে যায়। গ্ল্যাড‍্স্টোন অনর্গল বলেন বটে, কিন্তু তাঁর প্রতি কথা ওজন-করা, তার কোনো অংশ অসম্পূর্ণ নয়। তিনি বক্তৃতার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্বরে জোর দিয়ে বলেন না, কেননা সে রুম বলপূর্বক বললে স্বভাবতই শ্রোতাদের মন তার বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে দাঁড়ায়। তিনি যে কথায় জোর দেওয়া আবশ্যক মনে করেন সেই কথাতেই জোর দেন। তিনি খুব তেজের সঙ্গে বলেন বটে, কিন্তু চীৎকার করে বলেন না; মনে হয় যা বলছেন তাতে তাঁর নিজের খুব আন্তরিক বিশ্বাস। গ্ল্যাড‍্স্টোনের বক্তৃতাও যেমন থামল অমনি হৌস শূন্যপ্রায় হয়ে গেল, দু দিকের বেঞ্চিতে ৬৷৭ জনের বেশি আর লোক ছিল না। গ্ল্যাড‍্স্টোনের পর স্মলেট যখন বক্তৃতা আরম্ভ করলেন তখন দুই দিককার বেঞ্চিতে লোক ছিল না বললেও হয়। কিন্তু তিনি ক্ষান্ত হবার পাত্র নন; শূন্য হাউসকে সম্বোধন করে তিনি অত্যন্ত দীর্ঘ এক বক্তৃতা করলেন। সেই অবকাশে আমি অত্যন্ত দীর্ঘ এক নিদ্রা দিই। দুই-এক জন মেম্বর, যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা কেউ বা পরস্পর গল্প করছিলেন কেউ চোখের ওপর টুপি টেনে দিয়ে ডিসরেলীর পদচ্যুতির পর রাজ্যের প্রধান মন্ত্রী হবার স্বপ্ন দেখছিলেন। হৌসে Irish memberদের ভারী যন্ত্রণা; সে বেচারিরা যখন বক্তৃতা করতে ওঠে তখন হাউসে যে অরাজকতা উপস্থিত হয় সে আর কী বলব! চার দিক থেকে ঘোরতর কোলাহল আরম্ভ হয়, অভদ্র মেম্বরেরা হাঁসের মত ‘ইয়া’ ‘ইয়া’ করে চেঁচাতে থাকে। বিদ্রূপাত্মক ‘hear’ ‘hear’ শব্দে বক্তার স্বর ডুবে যায়। এই রকম বাধা পেয়ে বক্তা আর আত্মসম্বরণ করতে পারেন না, খুব জ্বলে ওঠেন; আর তিনি যতই রাগ করতে থাকেন ততই হাস্যাস্পদ হন। আইরিশ মেম্বরেরা এই রকম জ্বালাতন হয়ে

৪৬