পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

এক শিলিং ব্যয় করতে পারেন। যা হোক, বিলেতে প্রথম পদার্পণ করবামাত্রেই তাঁরা এই অতি নতুন ও আশ্চর্য জ্ঞান লাভ করেন যে, ইংরাজরা কী ভদ্র! আমি ধাঁদের বিষয় লিখছি তাঁরা অনেক বৎসর বিলাতে আছেন, বিলেতের নানা প্রকার ছোটোখাটো জিনিস দেখে তাঁদের কিরকম মনে হয়েছিল তা তাঁদের স্পষ্ট মনে নেই। যে-সব বিষয় তাঁদের বিশেষ মনে লেগেছিল তাই এখনও তাঁদের মনে আছে। তাঁরা বিলেতে আসবার পূর্বে তাঁদের বিলিতি বন্ধুরা এখানে তাঁদের জন্যে ঘর ঠিক করে রেখেছিলেন। ঘর ঢুকে দেখেন— ঘরে কার্পেট পাতা, দেয়ালে ছবি টাঙানো, একটা বড়ো আয়না এক জায়গায় ঝোলানো রয়েছে, কৌচ, কতকগুলি চৌকি, দুই-একটা কাঁচের ফুলদানি, এক পাশে একটি ছোটো পিয়ানো। কী সর্বনাশ! তাঁদের বন্ধুদের ডেকে বললেন, ‘আমরা কি এখেনে বড়োমানুষি করতে এসেছি? আমাদের, বাপু, বেশি টাকাকড়ি নেই; এ রকম ঘরে থাকা আমাদের পোষাবে না!’ তাঁদের বন্ধুরা অত্যন্ত আমোদ পেলেন; কারণ, তখন তাঁরা একেবারে ভুলে গেছেন যে বহুপূর্বে তাঁদেরও এক দিন এই রকম দশা ঘটেছিল। নবাগতদের নিতান্ত অন্নজীবী বাঙালি মনে করে অত্যন্ত বিজ্ঞতার স্বরে সেই বন্ধুরা বললেন, ‘এখানকার সকল ঘরই এই রকম।’ তাঁরা বললেন, ‘বটে!’ দেশের উপর বৈরাগ্যের এই তাঁদের প্রথম সূত্রপাত হল। তাঁরা বলেন, ‘আমাদের দেশে সেই একটা স্যাঁৎসেঁতে ঘরে একটা তক্তা ও তার উপরে একটা মাদুর পাতা, ইতস্ততঃ হুঁকোর বৈঠক রয়েছে, কোমরে একটুখানি কাপড় জড়িয়ে জুতো জোড়া খুলে দু চার জনে মিলে শতরঞ্চ খেলা যাচ্ছে, বাড়ির উঠোনে একটা গোরু বাঁধা, দেয়ালে গোবর দেওয়া, বারান্দা থেকে ভিজে কাপড় শুকোচ্ছে ইত্যাদি। সেখান থেকে এসে এ কার্পেট-মোড়া

৫৪