পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম পত্র

চিত্রিত-দেয়াল চৌকি-টেবিল-সমাকুল ঘরে বাস করতে পাওয়া অনেক জন্মের অনেক তপস্যার ফল বলে মনে হয়।’ তাঁরা বলেন— প্রথম প্রথম দিনকতক তাঁদের সে ঘর কেমন আপনার মতো মনে হত না; চৌকিতে বসতে, কৌচে শুতে, টেবিলে খেতে, কার্পেটে বিচরণ করতে অত্যন্ত সংকোচ বোধ হত। কৌচে বসতে হলে অত্যন্ত আড়ষ্ট হয়ে বসতেন; ভয় হত, পাছে কৌচ ময়লা হয়ে যায় বা কোনো প্রকার হানি হয়। তাঁদের মনে হত, কৌচগুলো কেবল ঘর সাজাবার জন্যেই রেখে দেওয়া হয়েছে, ওগুলো ব্যবহার করতে দিয়ে মাটি করা কখনই ঘরের কর্তার অভিপ্রেত হতে পারে না। ঘরে এসে প্রথম মনের ভাব তো এই। তার পরে আর-একটি প্রধান কথা বলা বাকি আছে।

 বিলেতে ছোটোখাটো বাড়িতে ‘বাড়িওয়ালা’ বলে একটা জীবের অস্তিত্ব আছে হয়তো; কিন্তু যাঁরা বাড়িতে থাকেন, ‘বাড়িওয়ালী’র সঙ্গেই তাঁদের সমস্ত সম্পর্ক। ভাড়া চুকিয়ে দেওয়া, কোনো প্রকার বোঝাপড়া আহারাদির বন্দোবস্ত করা, সে-সমস্তই বাড়িওয়ালীর কাছে। আমার বন্ধুরা যখন প্রথম বাড়িতে পদার্পণ করলেন, দেখলেন, এক বিবি এসে অতি বিনীত স্বরে তাঁদের ‘সুপ্রভাত’ অভিবাদন করলে; তাঁরা নিতান্ত শশব্যস্ত হয়ে ভদ্রতার যথাযোগ্য প্রতিদান দিয়ে অতি আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। কিন্তু যখন তাঁরা দেখলেন তাঁদের অন্যান্য ইঙ্গবঙ্গ বন্ধুগণ তার সঙ্গে অতি অসংকুচিত স্বরে কথাবার্তা আরম্ভ করে দিলেন, তখন আর তাঁদের বিস্ময়ের আদি অন্ত রইল না। মনে করো একটা জীবন্ত বিবি— জুতো-পরা, টুপি-পরা, গাউন-পরা! তখন সে ইঙ্গবঙ্গ বন্ধুদের উপর সেই নবাগত বঙ্গযুবকের অত্যন্ত ভক্তির উদয় হল, কোনো কালে যে এই অসমসাহসিকদের মতো তাঁদেরও

৫৫