পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

বুকের পাটা জন্মাবে তা তাঁদের সম্ভব বোধ হল না। যা হোক, এই নবাগতদের যথাস্থানে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়ে ইঙ্গবঙ্গ বন্ধুগণ স্ব স্ব আলয়ে গিয়ে সপ্তাহকাল ধরে তাঁদের অজ্ঞতা নিয়ে অপর্যাপ্ত হা্যকৌতুক করলেন। পূর্বোক্ত গৃহকর্ত্রী প্রত্যহ নবাগতদের অতিবিনীতভাবে কী চাই কী না চাই জিজ্ঞাসা করতে আসত। তাঁরা বলেন, এই উপলক্ষে তাঁদের অত্যন্ত আহ্লাদ হত। তাঁদের মধ্যে একজন বলেন, প্রথম দিন, যে দিন তিনি এই বিবিকে একটুখানি ধমকাতে পেরেছিলেন, সে দিন সমস্ত দিন তাঁর মন অত্যন্ত প্রফুল্ল ছিল। জীবনের মধ্যে এই প্রথম একজন ইংরেজকে একজন বিবিকে ধমকাতে পেরেছিলেন, অথচ সে দিন সূর্য পশ্চিম দিকে ওঠে নি, পর্বত চলাফেরা করে বেড়ায় নি, বহ্নিও শীতলতা প্রাপ্ত হয় নি!

 কার্পেট-মোড়া ঘরে তাঁরা অত্যন্ত সুখে বাস করছেন। তাঁরা বলেন, ‘আমাদের দেশে ‘আমার নিজের ঘর’ বলে একটা স্বতন্ত্র পদার্থ ছিল না। আমি যে ঘরে বসতেম সে ঘরে বাড়ির দশজনে যাতায়াত করছে; আমি এক পাশে বসে লিখছি, দাদা এক পাশে একখানা বই হাতে করে ঢুলছেন, আর-এক দিকে মাদুর পেতে গুরুমশায় ভুলুকে উচ্চৈঃস্বরে সুর করে করে নামতা পড়াচ্ছেন। এখানে আমার নিজের ঘর আমার নিজের মনের মতো করে সাজালেম, সুবিধামত করে বইগুলি এক দিকে সাজালেম, লেখবার সরঞ্জাম এক দিকে গুছিয়ে রাখলেম, কোনো ভয় নেই যে একদিন পাঁচটা ছেলে মিলে সে-সমস্ত ওলটপালট করে দেবে, আর-এক দিন দুটোর সময় কালেজ থেকে এসে দেখব তিনটে বই পাওয়া যাচ্ছে না— অবশেষে অনেক খোঁজ্ খোঁজ্ ক’রে দেখা যাবে বাড়ির ভিতরে মেঝমাসিমার কুলুঙ্গির উপর একখানা, দাদার বালিশের

৫৬