পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

কানে কানে অতি মৃদু ধীর স্বরে মিষ্টি-মিষ্টি টুকরো-টুকরো দুইএকটি কথা আধো-আধো গলানো সুরে কইতে পারেন, কোমল মধুর হাসি হাসতে হাসতে দুটো রসগর্ভ বাক্য বলতে পারেন, আর সে মহিলার সহবাসে তিনি যে স্বর্গসুখ উপভোগ করছেন তা তাঁর মাথার চুল থেকে বুট-জুতোর আগা পর্যন্ত প্রকাশ হতে থাকে— সুতরাং, বিবি-সমাজে বাঙালিরা খুব পসার করে নিতে পারেন। এখানকার পুরুষসমাজে মিশতে গেলে অনেক পড়াশুনো থাকা চাই, নইলে অনেক কথায় অপ্রস্তুত হতে হয়। একটা বড়ো কথা পড়লে আমরা আমাদের পুরাতন চাণক্য ঋষির উপদেশ স্মরণ করি— অর্থাৎ, ‘তাবচ্চ শোভতে মূর্খো যাবৎ কিঞ্চিন্ন ভাষতে’। কিন্তু পুরুষ সঙ্গীদের কথাবার্তায় খুব যোগ না দিলে তেমন মেশামেশি হবার কোনো সম্ভাবনা নেই। মহিলাদের সঙ্গে বাক্যালাপ করতে আমাদের বড়ো শিক্ষার দরকার করে না, সে বিষয়ে আমাদের অশিক্ষিতপটুত্ব। আমাদের দেশের ঘোমটাচ্ছন্ন-মুখচন্দ্র-শোভী অনালোকিত অন্তঃপুর থেকে এখানকার রূপের মুক্তজ্যোৎস্নায় এসে আমাদের মন-চকোর প্রাণ খুলে গান গেয়ে ওঠে।

 একদিন আমাদের নবাগত বঙ্গযুবক তাঁর প্রথম ডিনারের নিমন্ত্রণে গিয়েছেন। নিমন্ত্রণসভায় বিদেশীর অত্যন্ত সমাদর। তিনি গৃহস্বামীর যুবতী কন্যা Miss অমুকের বাহুগ্রহণ করে আহারের টেবিলে গিয়ে বসলেন। মিসের প্রতি হাসি প্রতি কথা তাঁর হৃদয়ের সমুদ্রে এক-একটা বিপর্যয় তরঙ্গ তুলতে লাগল। আমরা আমাদের দেশের স্ত্রীলোকদের সঙ্গে মুক্তভাবে মিশতে পাই নে, তার পরে নতুন-নতুন এসে এখানকার স্ত্রীলোকদের ভাবও ঠিক বুঝতে পারি নে। আমরা কোনো অপরিচিত মহিলার মুখ থেকে কথা শুনতে পেলে আহ্লাদে গ'লে পড়ি, সামাজিকতার

৫৮