শুনবামাত্র আমাদের একজন ইঙ্গবঙ্গ বন্ধু নিদারুণ ঘৃণার সঙ্গে বলে উঠলেন, ‘দেখুন দেখি, কী barbarous!’ আমি আর থাকতে পারলেম না— আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেম, ‘কেন barbarous বুঝিয়ে দিন তো মশায়!’ তিনি কোনো মতে বোঝাতে পারলেন না; তাঁর ভাবটা এই যে, যেমন মিথ্যে কথা না বলা, চুরি না করা নীতিশাস্ত্রের কতকগুলি মূল নিয়ম, তেমনি অন্য মানুষকে তার জীবিকার কথা জিজ্ঞাসা না করাও একটা মূল নিয়মের মধ্যে, তার জন্যে অন্য কারণ অনুসন্ধানের আবশ্যক করে না। আমি তাঁকে বললেম যে, ‘দেখুন মশায়, ইংরেজরা একটা জিনিস মন্দ বলে ব’লে আপনি অবিচারে অকাতরে সেটাকে মন্দ বলবেন না। কেন ইংরেজরা মন্দ বলছে সেটা আগে বিচার করে দেখবেন, তার পরে যদি যুক্তিসিদ্ধ মনে হয় তা হলে নাহয় মন্দ বলবেন। চাকরির কথা জিজ্ঞাসা কর। ইংরাজেরা যে কেন মন্দ বলে তার অবিশ্যি কারণ আছে— অল্প বেতনে আপনি হয়তো অতি সামান্য চাকরি করছেন, আপনাকে চাকরির কথা জিজ্ঞাসা করলে আপনার হয়তো উত্তর দিতে সংকোচ বোধ হতে পারে। কিন্তু আপনি যখন barbarous বলে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন তখন এ-সকল কারণ বিবেচনা করেন নি।’ এর থেকে বেশ বুঝতে পারবে যে, যে ইঙ্গবঙ্গগণ আমাদের দেশীয় সমাজে নানা প্রকার কুসংস্কার আছে বলে নাসা কুঞ্চিত করেন, বিলেত থেকে তাঁরা তাঁদের কোটের ও প্যাণ্টলুনের পকেট পূরে রাশি রাশি কুসংস্কার নিয়ে যান। কুসংস্কার আর কাকে বলে বলো। যতক্ষণে তুমি তোমার বিশেষ সংস্কারের একটা সন্তোষজনক কারণ দেখাতে না পারো ততক্ষণ আমি তাকে কুসংস্কার বলব। অতএব, হে ইঙ্গবঙ্গ, তুমি ভারতবর্ষের প্রতি সামাজিক আচার ব্যবহারকে যে prejudice বলে ঘৃণা কর, সেই ঘৃণা করাটাই হয়তো এক প্রকার
পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৯
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম পত্র
৬৩
