পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

আমি অনুসন্ধান করে দেখেছি— কেবল বাহ্য-চাকচিক্য। এ বিষয়ে তাঁরা ঠিক বালকের মতো। একখানি বই দেখলে তাঁরা তার সোনারজলের-চিত্র-করা বাঁধানো মলাট দেখে হাঁ করে থাকেন, তার ভিতরে কী লেখা আছে তার বড়ো খবর রাখেন না। কতকগুলি বাঙালি বলেন, এখানকার মতো ঘর ভাড়া দেবার প্রথা তাঁরা আমাদের দেশে প্রচলিত করবেন। তাঁদের সেই একটিমাত্র সাধ আছে। তাঁদের চোখে বিলেতের আর-কিছু তেমন পড়ে নি, যেমন, বিলেতের ঘর ভাড়া দেবার প্রথা! আর এক জন বাঙালি, তিনি আমাদের বাঙালা সমাজসংস্কার করতে চান, তাঁর প্রধান বাতিক— তিনি আমাদের দেশের মেয়েদের নাচ শেখবার বন্দোবস্ত করে দেবেন। বিলেতের সমাজে মেয়েদের পুরুষদের সঙ্গে একত্রে নাচাটাই তাঁর চোখে অত্যন্ত ভালো লেগেছে ও আমাদের সমাজে মেয়েদের না নাচাই তাঁর প্রধান অভাব বলে মনে হয়—তিনি এখানকার সমাজসমুদ্র মন্থন করে ঐ নাচটুকুই পেয়েছেন। এই রকম বিলেতের কতকগুলি ছোটোখাটো বিষয়ই তাঁদের চোখে পড়ে। তাঁরা বিশেষ কী কী কারণে বিলেতের ওপর এত অনুরক্ত ও আমাদের দেশের ওপর এত বিরক্ত হয়ে ওঠেন তা যদি দেখতে যাও তো দেখবে সে-সকল অতি সামান্য—আমি পূর্বেই তা সংক্ষেপে বলেছি। প্রথমতঃ, এখানকার সুসজ্জিত পরিষ্কার পরিপাটী নিরিবিলি বাসস্থানে স্বাধীনভাবে বাস করবার বন্দোবস্ত। দ্বিতীয়তঃ, এখানকার মহিলাদের সঙ্গে মেশামেশি; তাদের মৃদুহাসি মিষ্টালাপ শিষ্টাচার এক জন বঙ্গযুবকের মাথা অতি শীঘ্র ঘুরিয়ে দেয়। তিনি আমাদের দেশের মেয়েদের সঙ্গে এখানকার মেয়েদের তুলনা করতে থাকেন। দেখেন, এখানকার মেয়েরা কেমন স্পষ্ট ও মিষ্ট কথা কয়, একটা কথা জিজ্ঞাসা করলে তার উত্তর পাবার জন্যে বছর পাঁচেক অপেক্ষা

৬৬