পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম পত্র

করতে হয় না; তাদের মুখের উপরও যেমন ঘোমটার আবরণ নেই তেমনি তাদের প্রতি আচার ব্যবহারের উপরে এক প্রকার কষ্টকর সংকোচের আবরণ নেই। এই রকম কতকগুলি সাধারণ বিষয়ে আমাদের দেশের ও এ দেশের মেয়েদের অমিল দেখে তার পরে তিনি কতকগুলি বিশেষ বিশেষ বিষয় নিয়ে ছেলেমানুষের মতো খুঁতখুঁৎ করতে থাকেন। যে বালকের মাটির পুতুল আছে সে আর-একটি বালকের কাঠের পুতুল দেখে প্রথমতঃ তার নিজের কাঠের পুতুল নেই বলে কাঁদতে বসে; এই রকমে তার নিজের পুতুলের ওপর যখন একবার বৈরাগ্য জন্মায় তখন সেই কাঠের পুতুলের কানে একটা মাকড়ি দেখে তার খুঁতখুঁৎ দ্বিগুণ বেড়ে ওঠে; তখন বিবেচনা করে না যে, সেই কাঠের পুতুলের কানে যেমন একটা মাকড়ি আছে তেমনি তার মাটির পুতুলের গলায় একটা হার আছে। তার মা এসে বলে, ‘আচ্ছা বাপু, তোর পুতুলের হাতে একটা বালা পরিয়ে দিচ্ছি।’ সে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে চিৎকার করে বলে ওঠে, ‘না, আমার মাকড়ি চাই!’ তার মা বলে, ‘আচ্ছা বাপু, একটা মল দিচ্ছি নাহয়!’ সে দ্বিগুণ পা ছুঁড়ে বলে ওঠে, ‘না, আমাকে মাকড়ি দে।’ ইঙ্গবঙ্গের কতকটা এই রকম করেন। এক জন ইঙ্গবঙ্গ মহা খুঁৎখুঁৎ করছিলেন যে, আমাদের দেশের মেয়েরা পিয়ানো বাজাতে পারে না ও এখানকার মতো visitorদের সঙ্গে দেখা করতে ও visit প্রত্যর্পণ করতে যায় না। হরি হরি! তুমি কী করে আশা করতে পারো যে আমাদের মেয়েরা পিয়ানো বাজাতে পারবে? তা হলে এক জন বাঙালি এখানে এসে খুঁতখুঁৎ করতে পারে যে, এ দেশের মেয়েরা পান সাজতে পারে না। দেশে থাকতে একবার শুনেছিলেম যে, আমাদের দেশের মেয়েদের উপর এক জন বাঙালির অভক্তি

৬৭