বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

কর[] তবে এক জন ইংরাজ তাতে বড়ো আশ্চর্য হবেন না, কেননা, তিনি জানেন তুমি বিদেশী; কিন্তু এক জন ইঙ্গবঙ্গ সেখানে উপস্থিত থাকলে তাঁর স্মেলিং সল্টের আবশ্যক করবে। তুমি যদি শেরী খাবার গ্লাসে শ্যাম্পেন খাও তবে এক জন ইঙ্গবঙ্গ তোমার দিকে তিন দণ্ড হাঁ করে তাকিয়ে থাকবেন, যেন এমন জানোয়ার তিনি কখনো দেখেন নি—যেন একটা অভূতপূর্ব নিদারুণ বিপ্লব বেধে গেল— যেন তোমার এই একটি অজ্ঞতার জন্যে সমস্ত পৃথিবীর সুখশান্তি নষ্ট হবার উপক্রম হয়েছে। সন্ধ্যে বেলায় তুমি যদি morning-coat পরো তা হলে তিনি ম্যাজিস্ট্রেট হলে যাবজ্জীবন তোমাকে দ্বীপান্তরবাসের আজ্ঞা দেন।

 এক জন বিলাত-ফেরতা কাউকে মটন দিয়ে রাই দিয়ে[] খেতে দেখলে বলতেন, ‘তবে কেন মাথা দিয়ে চল না?’ তাঁর চক্ষে রাই দিয়ে মটন খাওয়াও যা আর মাথা দিয়ে হাঁটাও তাই! এই রকম সব ছোটোখাটো বিষয়েই ইঙ্গবঙ্গদের যত দৃষ্টি। ছোটোখাটো বিষয়ে এত খুঁটিনাটি কেন, যদি জিজ্ঞাসা করো তবে তার একটা কারণ দেখাতে পারি। বাঙালি হয়ে সাহেবের মুখোষ পরতে গেলে প্রতি পদে ভয় হয় পাছে বাঙালিত্ব বেরিয়ে পড়ে; সুতরাং প্রতি সামান্য বিষয়ে সাবধান হওয়া স্বাভাবিক। তোমার বুকটা ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কালো হলেও হানি নেই, কেননা সে-সব কাপড়ে ঢাকা থাকে, কিন্তু মুখটা এমন সাবধানে চুনকাম করা আবশ্যক যে কোনো জায়গায় কালো বেরিয়ে না থাকে। তুমি,

৭০
  1. ইংরাজেরা মাছ খাবার সময় কেবল মাত্র কাঁটা ব্যবহার করেন। মাছ খাবার এক প্রকার বিশেষ ছুরি আছে।
  2. বিলাতী ঔদরিক-শাস্ত্রে রাই দিয়ে মটন খাওয়া নিষিদ্ধ।