পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম পত্র

যদি সাহেব হতে চাও, তবে সাহেবদের যতখানি বাইরে চর্মচক্ষে দেখা যায় ততখানি নকল করলেই যথেষ্ট। যে বাঙালিরা বিলেতে আসেন নি তাঁরা তোমার বাঁকানো ইংরিজি সুর, তোমার হ্যাট কোট ও তোমার উদগ্র মূর্তি দেখে তাক হয়ে থাকবেন। কিন্তু একটা মজা দেখেছি, ইঙ্গবঙ্গেরা পরস্পর আপনাদের চেনেন; তাঁরা দলবহির্ভূত লোকদের কাছে যথেষ্ট আস্ফালন করেন বটে, কিন্তু তাঁদের পরস্পরের কাছে কিছু গোপন নেই, তাঁরা নিজে বেশ জানেন যে—

কাকস্য পক্ষৌ যদি স্বর্ণযুক্তৌ
মাণিক্যযুক্তৌ চরণৌ চ ত্যস্য
একৈকপক্ষে গজরাজমুক্তা
তথাপি কাকো ন চ রাজহংসঃ।

সোনা দিয়ে বাঁধা হোক কাকটার ডানা,
মাণিকে জড়ানো হোক তার পা-দুখানা,
এক এক পক্ষে তার গজমুক্তা থাক্—
রাজহংস নয় কভু, তবুও সে কাক।

 আমি আর একটি আশ্চর্য লক্ষ্য করে দেখেছি যে, বাঙালিরা ইংরাজদের কাছে যত আপনাদের দেশের লোকের ও আচারব্যবহারের নিন্দে করেন এমন এক জন ঘোর ভারতদ্বেষী অ্যাংগ্লো-ইন্‌ডিয়ান করেন না। তিনি নিজে ইচ্ছে করে কথা পাড়েন ও ভারতবর্ষের নানা প্রকার কুসংস্কার প্রভৃতি নিয়ে প্রাণ খুলে হাস্য পরিহাস করেন। তিনি গল্প করেন যে, আমাদের দেশে বল্লভাচার্যের দল বলে এক প্রকার বৈষ্ণবের দল আছে— তাদের সমস্ত অনুষ্ঠান সবিস্তারে বর্ণনা করতে থাকেন। তিনি বলেন, ভারত-

৭১